খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় সরকারের না

বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আপাতত কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি ও বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার আবেদনের বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান। আইনমন্ত্রী বলেন, তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলেও তিনি বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। দেশে বিদেশি চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন। এর আগেও তিনি বিদেশি চিকিৎসক এর মাধ্যমে চিকিৎসা করিয়েছেন। আইনমন্ত্রী বলেন, তার পরিবার বিদেশ নেয়ার বিষয়ে যে চিঠি দিয়েছেন তাতে ঠিক আগের মতোই স্থায়ী মুক্তি চাচ্ছেন। আমি বুঝলাম না স্থায়ী মুক্তি মানে কী? বিদেশে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাচ্ছেন। আমার কাছে এ সংক্রান্ত ফাইলটি গতকাল এসেছে। ওনারা কী লিখেছেন সেটা দেখে ভালো করে বিবেচনা করে অতিসত্বর এটা নিষ্পত্তি করা হবে।

মঙ্গলবারের মধ্যে হয়ে যাবে বলে আশা করছি। তার ৬ মাসের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৫শে মার্চ। তিনি বলেন, একটি বিষয় আমি বুঝতে পারছি না। বহুবার আমি আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছি, যেই শর্তে তাকে ৪০১ ধারায় মুক্তি দেয়া হয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধি এর বাইরে আইনিভাবে আমাদের আর কিছু করার নেই। তারপরেও আমি দেখছি প্রথম যে চিঠি লেখা হয়েছিল সেই আকারে একইভাবে আবার করা হয়েছে। আবেদনটি আমি দেখবো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমার সচিব এটা পেয়েছেন। সরকার প্রধান চাইলে বেগম জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান যখন ৪০১ ধারায় প্রথমবার এটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন তাই এখন এটা পরিবর্তন করার কিন্তু কোনো আইনি বিধান নেই। সরকার প্রধানকে কিন্তু আইনের মধ্যে থেকে তার বিবেচনা বা মানবিক কারণ দেখাতে হবে। আইনের বাইরে গিয়ে তিনি বিবেচনা বা মানবিক কারণ দেখাতে পারবেন না।
আনিসুল হক বলেন, আমরা আগের আইনি ব্যাখ্যায় যেটা স্পষ্টভাবে দাঁড়ায় তা হলো- বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না। তার মানে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে তাকে চিকিৎসা করার অনুমতিও আমরা দিয়েছিলাম। ডাক্তার তাকে চিকিৎসা করেছেন, তাকে সুস্থও করেছেন। এদিকে গত ৬ই মার্চ খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে তার ছোটভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। আবেদনে তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। পরে সেই আবেদনের বিষয়ে মতামত নিতে সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
সর্বশেষ গত বছরের ২৪শে সেপ্টেম্বর থেকে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ আগামী ২৫শে মার্চ শেষ হবে। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। অসুস্থতা বাড়লে মাঝে মাঝে তাকে হাপাতালে নিতে হচ্ছে। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্বাস্থ্যের কিছু পরীক্ষা শেষে গত ১৪ই মার্চ গুলশানের বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।

আইএলও’র বৈঠক প্রসঙ্গ: এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির সভায় দুটি দেশ বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিয়ে সমালোচনা করেছে বলে সভায় যোগ দিয়ে দেশে ফেরার পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মন্ত্রী আনিসুল হক। আইএলও’র মিটিংয়ে বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে আপনার কি প্রস্তাবনা ছিল জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, আপনারা সবাই জানেন ২০১৯ সালে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার সম্বন্ধে একটা নালিশ করা হয়েছিল আইএলও’র কাছে। সেই নালিশের নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। বারবার হেয়ারিং হচ্ছে। প্রতিবারই সেই নালিশটির বিষয়ে যখন আলোচনা হওয়ার দরকার তখন আলোচনা হয়। তিনি বলেন, আইএলও গভর্নিং বডির মিটিংয়ে বছরে দু’বার বাংলাদেশে শ্রম অধিকারের যে অগ্রগতি হয়েছে সে বিষয়ে তাদের জানাই। এবারো সেই কাজটি করেছি। সেখানে একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেটা হলো- এবার নালিশের বিষয়টি নিষ্পত্তি না করে আগামী নভেম্বরে নিষ্পত্তি করার কথা বলা হয়েছে।

আগামী নভেম্বরে আইএলও’র গভর্নিং বডির মিটিং বসবে। এবার আলোচনায় ২৫টি দেশ অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে ১৪টি দেশে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছে। একই সঙ্গে বলেছে, নালিশটির সমাপ্তি টানা উচিত। এর বাইরে আরও ৯টি দেশ বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিয়ে আলোচনা করেছে। শ্রমিক অধিকারের যে অগ্রগতি হয়েছে সেটা স্বীকার করেছে। একই সঙ্গে আরও অগ্রগতি হওয়া দরকার, সে বিষয়ে সুপারিশ করেছে এবং আগামী নভেম্বরে এ নালিশটির নিষ্পত্তি হওয়া উচিত সে ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। তবে কানাডা ও আর্জেন্টিনা- এ দুটি দেশ বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিয়ে সমালোচনা করেছে। তারা যেসব তথ্য দিয়েছে সেগুলো পুরোনো তথ্য। আর এখন যে অগ্রগতি হয়েছে সেটা তারা বিবেচনায় নেয়নি। তাদের বক্তব্যে সেটা উঠে এসেছে’ বলেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই যে নালিশটি প্রলম্বিত করা হচ্ছে সেটা বাংলাদেশের ওপরে সঠিক বিচার করা হচ্ছে না। আমরা আশা করছি ও আশ্বস্ত হয়েছি আগামী নভেম্বরে নালিশটির নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।