ফটিকছড়িতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক পারাপার!

শওকত হোসেন করিম, ফটিকছড়ি:

চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের পাশে ফটিকছড়ি ধুরুং খুলশী লায়ন্স উচ্চ বিদ্যালয় সামনের এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা। ফলে ঝুঁকি নিয়েই সড়কের একপাশ থেকে অন্যপাশে চলাচল করতে হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন স্কুল  ও উচ্চ বিদ্যালয় এর কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা। এদিকে শিক্ষার্থীদের স্কুল পাঠিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কটি প্রশস্ত করণের মাধ্যেম উন্নীত হলেও সড়কের স্কুলের এ অংশ কোনো ফুট ওভারব্রিজ নেই। এমনকি সড়কটির এ অংশে কোথাও গতিরোধক কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল করে। এতে করে প্রতিনিয়তই স্কুল শিক্ষার্থীরা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হয়ে স্কুলে যাচ্ছে। জানা গেছে, বৃহত্তর চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক চট্টগ্রাম -খাগড়াছড়ি সড়কটি। ফটিকছড়ি পৌরসভা ৭ নং ওয়ার্ড এলাকায় আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ঐতিহ্যবাহী ধুরুং খুলশী লায়ন্স উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে আরও দুটি স্কুল। একটি কেজি স্কুল অপরটি ধুরুং জুবিলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই ৩ স্কুলে প্রায় ১ হাজার ৬ শত শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিদিন স্কুল ছুটি হলে শত শত শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রাম -খাগড়াছড়ি মহাসড়কটি পার হতে হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ত একটি সড়ক। স্কুল ছুটি হলেই শত শত শিক্ষার্থী সড়কটি পারাপারের জন্য  সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। অনেক শিক্ষার্থী আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে সড়কটি পার হতে ব্যস্ত। কিছু কিছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাদের ছেলে মেয়ের হাত ধরে সড়কটির পার করাতে দেখা যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ হতে একজন দপ্তরী নুরুল আবছার ও একজন মেয়ে আয়া রীতা রাণী লাল পতাকা হাতে নিয়ে দ্রুতগতির গাড়ি থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনেক চালক গাড়ি থামালেও বেশিরভাগই গাড়ি না থামিয়ে চলে যায়। স্কুল শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ফুট ওভারব্রিজ না থাকায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হতে হয়। অনেকে সড়ক পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। মহাসড়কটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরার আগেই ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা জরুরি। ইয়াছমিন আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, দুর্ঘটনা রোধে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের এ অংশে একটি ফুট ওভারব্রিজ থাকলে যাতায়াতে সুবিধা হত। স্কুলের সামনে সড়কটির কোনো অংশেই গতিরোধক না থাকায় বেপারোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল করে। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি পারাপার করতে হচ্ছে। তাই কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরার আগেই ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা জরুরি। ধুরুং জুবিলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন- এ এলাকায় অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপার হতে হয়। আমরা এর আগে উপজেলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি জানিয়েছি। এরপর গতিরোধক (স্পীড ব্রেকার) হওয়ার বিল পাসের ১বছর হলেও প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।  পেড্রোলো খুলশী লায়ন্স কিন্ডারগার্টেন এর শিক্ষিকা উম্মে সালমা বলেন- স্কুলের ভিতরের দায়িত্ব আমাদের। বাইরে থেকে যে যার মত আসে এবং নিয়ে যায়। তারপরেও আয়া দপ্তরিরা অনেক সময় সহযোগিতা করে। ধুরুং খুলশী লায়ন্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) এম এ বারেক বলেন- বিষয়টি আমরা স্ব স্ব দপ্তরে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয়। আমরা চাই এখানে একটা স্পীড ব্রেকার অথবা ফুড ওভার ব্রীজ হলে বেশি ভাল হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন- এ কাজটি করার দায়িত্ব সড়ক ও জনপদ বিভাগের। আমরা সওজ বিভাগকে বিষয়টি অবগত করবো। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন- এ ব্যাপারে আমরা এর আগে কোন আবেদন বা কেউ আমাদের জানায়নি। মহাসড়কে স্পীড ব্রেকার দেয়াটা আসলে অপরাধ। তবে যদি এ বিষয়ে কোন আবেদন বা দাবিদাওয়া পায় তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ফুড ওভার ব্রীজ নির্মাণের কথা বলা যাবে।