বাংলাদেশি জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে, দায়িত্ব নেবে অন্য জলদস্যুরা

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজটি এই মুহূর্তে সোমালিয়া উপকূল থেকে প্রায় ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে। আগামী ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টার মধ্যে এটি সোমালিয়ার কোনো বন্দরে নোঙর করা হতে পারে।

বুধবার সকাল ১০টা ৪০মিনিটে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ বর্তমানে সোমালিয়া উপকূল থেকে প্রায় ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে। জাহাজটিকে নিয়ে সোমালিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে জলদস্যুরা। উপকূলে নোঙর করতে আরও একদিন লাগতে পারে।’

এদিকে, আজ বেলা ১১টার দিকে নাবিকদের একজন ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ পরবর্তী পরিস্থিতির অবস্থা জানিয়ে তার ভাতিজাকে ভয়েস ম্যাসেজে করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সোমালিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা আগামীকাল সেখানে পৌঁছাবো। যতটুক কথা হয়েছে, সেখানে আমাদের অপর একটি পার্টির কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

পরিবারের দেখাশোনার অনুরোধ জানিয়ে ইব্রাহীম খলিল বলেন, ‘শুনতেছি আমাদের কয়েকমাস আটকায় রাখবে। আমি তোর চাচিকে তেমন কোনো টাকা দিয়ে আসতে পারি নাই। কার্ডও আমার কাছে। তুই তোর চাচিকে কিছু টাকা দিস। না হলে ওদের চলা অসম্ভব হয়ে যাবে।’

এর আগে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা নাগাদ জাহাজটি উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল বলে জানান এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিম।

মঙ্গলবার দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি। এরপর বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়া নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দস্যুরা। বর্তমানে নাবিকদের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

দস্যুদের কবলে পড়া জাহাজটি দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার। এর দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রসস্থতা ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’।

বৈশ্বিক জাহাজের অবস্থান নির্ণয়কারী সাইট মেরিন ট্রাফিক জানিয়েছে, জাহাজটি ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর ছেড়ে আসে। ১৯ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগেই এর দখল নেয় জলদস্যুরা।

জাহাজে থাকা একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাহাজে আনুমানিক ৫০ জন সশস্ত্র জলদস্যু অবস্থান করছিল। পরে দুটি দলে ভাগ হয়ে একটি দল মাছ ধরার ট্রলারে করে জাহাজের আগে আগে যেতে থাকে। পেছন পেছন পরিচালনা করা হচ্ছিল এমভি আবদুল্লাহকে। নাবিকদের সবার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাহাজের নাবিক আসিফুর রহমান ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে আমরা আক্রমণের শিকার। আমরা সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছি। আমাদের প্রার্থনায় রাখুন।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জলদস্যুদের নিজস্ব চ্যানেল আছে। কয়েকটি গ্রুপ ভাগ হয়ে এ কাজটি করে। যারা জাহাজ ছিনতাই করেছে তারা সোমালিয়া বন্দরে নিয়ে গিয়ে অন্য পার্টির কাছে দিয়ে দেবে। তারাই মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এখন পর্যন্ত সেই ধরনের মেসেজ আসেনি। তাদের পদক্ষেপ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বাংলাদেশি নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’