পরমাণু বোমা তৈরির পথে যাত্রা শুরু করেছে ইরান

পরমাণু বোমা তৈরির পথে যাত্রা শুরু করেছে ইরান। ছয় বিশ্ব পরাশক্তির সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রোববার সকালে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ইউরেনিয়ামের মাত্রা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের বেশিতে উন্নীত করতে কাজ শুরুর ঘোষণা দেন। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেটি শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

তেহরানের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো এড়ানোর উপায় বের করতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে ৬০ দিন সময় বেঁধে দিয়েছিল ইরান। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার পরই ইউরেনিয়াম বাড়ানের এ ঘোষণা এলো।

বিবিসি জানিয়েছে, বোমা তৈরি নয়, বুশেহর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি পেতে ইউরেনিয়ামের এ মাত্রা বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আরাকচি। এর আগে শনিবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইরানি কর্মকর্তা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৫ শতাংশে উন্নীত করা হচ্ছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন।

পরমাণু অস্ত্র বানাতে ইউরেনিয়ামের মাত্রা ৯০ শতাংশ বা তার বেশি হতে হয়। চার বছর আগে স্বাক্ষরিত ইরান পরমাণু চুক্তিতে সমৃদ্ধকরণের মাত্রা সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশে রাখার শর্ত ছিল। তবে ইউরেনিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে কত শতাংশে উন্নীত করা হবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি আরাকচি।

উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তার দেশ এখনও ২০১৫ সালে হওয়া জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তিটি রক্ষা করতে চায়। গত বছর ওয়াশিংটন সরে যাওয়ার পর চুক্তিটি বাঁচাতে ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেরাই যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণে তারা ব্যর্থ হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। নিজেদের প্রত্যাহারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞাও পুনর্বহাল করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার বর্ষপূর্তিতে তেহরান ওই নিষেধাজ্ঞাগুলো এড়ানোর উপায় বের করতে ইউরোপকে ৬০ দিন সময় বেঁধে দিয়েছিল।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে আলোচনার দরজা খোলা থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন আরাকচি। চলতি বছরের মে মাসে পরমাণু চুক্তির শর্ত ভেঙে ইউরেনিয়াম মজুদেরও ঘোষণা দিয়েছিল ইরান। যদিও ইরান শুরু থেকেই তার পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ অ্যাখ্যা দিয়ে আসছে।

বোমা বানাতে নয়, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য কাজে পরমাণুর ব্যবহারই তেহরানের লক্ষ্য, বলছে তারা। ইরানের ঘোষিত ইউরেনিয়াম বাড়ানোর মাত্রা ‘মধ্যম পর্যায়ের’ হলেও দেশটি ‘পারমাণবিক অস্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন ইসরাইলের জ্বালানিমন্ত্রী ইভুল স্টাইনেজ।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেলেও ইউরোপের দেশগুলো ওই পরমাণু চুক্তির শর্ত মেনে চলতে ইরানকে চাপ দিয়ে আসছিল। ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের নতুন ঘোষণা ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যকে বেকায়দায় ফেলবে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

তেহরানের নতুন পদক্ষেপ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর চরম উদ্বেগের মধ্যেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধা বলেছেন, তিনি এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ইরানের পরমাণু প্রশ্নে নতুন আলোচনা শুরুর শর্তগুলো ঠিক করতে একমত হয়েছেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ইরানের পরমাণু ইস্যু নিয়ে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে ম্যাত্রেঁদ্ধা তেহরানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন।’

২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কমিয়ে আনতে বিশ্বের ক্ষমতাধর ছয় দেশের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়। শর্ত ছিল ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি কমিয়ে আনার বিনিময়ে তাদের ওপর দেয়া অবরোধ ধীরে ধীরে তুলে নেয়া হবে।

বারাক ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

২০১৮ সালের নভেম্বরে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল রাখা হয়। ইউরোপীয় দেশগুলো সমঝোতা বাস্তবায়নের কথা বললেও কার্যত তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া এবং নিজেদের প্রতিশ্রুতি পালনে ইউরোপীয় দেশগুলোর ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে গত মে মাসে তেহরানও চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়।