কক্সবাজারে পর্যটকের খরা কেটেছে

কক্সবাজারে পর্যটকের খরা কেটেছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় গত আড়াই মাসে কক্সবাজারে পর্যটকের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তবে বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে কয়েক দিনের ছুটিতে পর্যটন নগরী ফের লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। সমুদ্র সৈকতসহ সর্বত্রই ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য।

এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম চলছে। বছরের এই সময়টাতে সাধারণত পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে কক্সবাজার। সবুজ বৃক্ষরাজি ঘেরা সুউচ্চ পাহাড় আর সাগরের মিতালির নয়নাভিরাম দৃশ্যের টানে শীতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার চলে আসেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। চলতি বছর এই নিয়মে কিছুটা ছন্দপতন ঘটলেও এখন আবার পর্যটন নগরী তার চিরচেনা চেহারা ফিরে পেয়েছে। কক্সবাজারে এখন শুধু দিনেই নয়, রাতেও পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। গত মাসখানেক ধরে চলা কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য মেলা স্থানীয় লোকজন ও আগত পর্যটকদের জন্য রাতে বিনোদনের খোরাক যোগাচ্ছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঝাউবাগান ঘেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন পর্যটন গলফ মাঠে চলমান শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় রাত ১২টা পর্যন্ত কেনাকাটাসহ নানাভাবে বিনোদন করার সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকেরা।

শুক্রবার সপরিবারে সৈকতে বেড়াতে আসা মোহাম্মদ ইউনূস খান বলেন, দিনে সৈকত ও প্রকৃতি দেখে সময়টা ভালোই কেটেছে সবার। সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিনোদন নেই। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাইনি কেউ। এক বন্ধু জানাল, মোটেল শৈবালের পাশে বাণিজ্য মেলা চলছে। পরিবার নিয়ে মেলায় বিনোদনের সুযোগ পেয়েছি। রাত ১২ কখন বেজেছে বুঝতেই পারিনি। শিশুদের নিয়ে এটা-সেটা কিনে, নাগর দোলায় চড়ে ভালোই সময় কেটেছে।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে আসা প্রবাসী ফরিদুল আলম বলেন, ভাইবোন ও পরিবার নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। সূর্য ডোবার পর আর কোথাও যাবার জায়গা পেলাম না। এত তাড়াতাড়ি হোটেলেও ফিরতে মন চাইলো না। তাই মাইকের শব্দ শুনে মেলায় ঢুকেছি। এটা-সেটা কিনে, বিভিন্ন রাইডে চড়ে, খাওয়াদাওয়ার মধ্যে কখন যে ঘণ্টা তিনেক সময় কেটে গেল বুঝতেই পারিনি।

মেলায় আসা শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা ও মারজান রেখা জানায়, নৌকা দোলনা, নাগরদোলা, ফাইভার ইলেকট্রিক চর্কি ও মিনি হাতি ঘোড়ায় চড়ে প্রচুর আনন্দ পেয়েছি। দেখেছি যাদুও। শিশুদের বিনোদনের জন্য মেট্রো রেল, জাম্পিং বেলুনে বাচ্চাদের নিয়ে ভিড় করে আছেন মায়েরা। নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের স্বাদ নিয়েছি আমরা।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ঐ মেলার প্রাঙ্গণে শুক্রবার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায়, মেলায় নির্মিত প্রধান ফটকটি খুবই দৃষ্টিনন্দন। প্রবেশ মুখেই স্থাপন করা হয়েছে চমত্কার পানির ফোয়ারা। রয়েছে আলোকসজ্জিত সুউচ্চ টাওয়ার। আছে ফায়ার ইউনিট ও মেডিক্যাল টিমও। ধুলাবালি কমাতে পুরো মাঠে ইট বিছানোর পাশাপাশি পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে নেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে চারপাশ।

মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব শাহেদ আলী সাহেদ বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও মেলাটি ব্যতিক্রমী ও জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সাজানো হয়েছে। রয়েছে বিনোদনের নানা ব্যবস্থা। মেলায় বসেছে শতাধিক স্টল, আছে মুখরোচক খাবারের দোকানও। মেলায় গার্মেন্টস পণ্য, হস্তশিল্প ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি ও উপহারসামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টিক, পলিমার পণ্য, হারবাল কসমেটিকস, প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারিসহ বিভিন্ন সামগ্রীর স্টল খোলা হয়েছে।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এখানে পর্যটকদের জন্য রাতে স্থায়ী কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে গত একমাস ধরে চলা বাণিজ্য মেলা রাতে পর্যটক ও স্থানীয় দর্শনার্থীদের বিনোদন অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।

মেলার আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ সালাউদ্দিন সেতু জানান, মেলায় সার্বক্ষণিক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে, মেলার চারপাশে ও ভেতরে রয়েছে সিসিটিভি। রয়েছে পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশও। নিরাপত্তার স্বার্থে মেলাস্থলে সব ধরনের হকার ও ভিক্ষুক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফুডকোর্টে অনিয়ম রুখতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মূল্য তালিকা। নারী উত্ত্যক্ত রোধে মেলায় রয়েছে পুলিশের বিশেষ টিম। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত চলবে এই মেলা।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, মেলার সিসি ক্যামরা সার্বক্ষণিক মনিটর করছে দায়িত্বরত পুলিশ। নারী উত্ত্যক্তসহ যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনারোধে সচেষ্ট রয়েছে পুলিশের বিশেষ টিম।