ফ্রিডম হাউসের ইন্টারনেট স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবনতি

এ বছর বাংলাদেশে অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আরও কমেছে বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউস। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট-২০২৩’ প্রতিবেদন। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাংবাদিকরা ক্রমবর্ধমান সহিংসতার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং বিরোধী দল বিএনপির সমর্থকরা অব্যাহত ক্র্যাকডাউনের স্বীকার হচ্ছেন। ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এবারের স্কোর ১০০-র মধ্যে মাত্র ৪১, যা গত বছর ছিল ৪৩। ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘আংশিক মুক্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ফ্রিডম হাউস।

এ পয়েন্টের ভিত্তিতে বিশ্বের দেশগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। পয়েন্ট ১০০ থেকে ৭০ এর মধ্যে থাকলে ‘মুক্ত’, ৬৯ থেকে ৪০ এর মধ্যে থাকলে ‘আংশিক মুক্ত’ এবং ৩৯ এর নিচে হলে ‘মুক্ত নয়’। এ হিসাবে ২০১৩ সাল থেকেই আংশিক মুক্ত শ্রেণির দেশগুলোর তালিকায় তলানির দিকে রয়েছে বাংলাদেশ।

এ বছর ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধায় বাংলাদেশের স্কোর ৩৫ এ ১২ ও কনটেন্টে বাধা প্রদানে বাংলাদেশ পেয়েছে ৩৫ এ ১৮। সবচেয়ে খারাপ অবস্থান ব্যবহারকারীদের অধিকার হরণে। এই ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ৪০ এ পেয়েছে ১১। এর সম্মিলিত যোগফল হচ্ছে ৪১, যেটা বাংলাদেশের এ বছরের স্কোর।

এর আগে টানা তিন বছর ধরে অবনতির পর গত বছর বাংলাদেশের স্কোর হঠাৎ করে বেড়ে ৪৩ হয়েছিল। তবে ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে উন্নতি ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। এ বছর আবারও স্কোর কমলো বাংলাদেশের। এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪০ এবং ২০২০ সালে ছিল ৪২।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো কীভাবে অনলাইন মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তার ওপর ভিত্তি করেই এই সূচক তৈরি করে ফ্রিডম হাউস। এ বছরের রিপোর্টে বলা হয়, বিরোধী দল বিএনপির সমাবেশের আগে বেশ কয়েকবার ইন্টারনেট এবং যোগাযোগ পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। তারা অব্যাহতভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অধীনে বিরোধী নেতা, সাংবাদিক, সরকারের সমালোচক এবং সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের টার্গেট করেছে। এরফলে অনলাইনে সেলফ-সেন্সরশিপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টা দুর্বল হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশের মধ্যে বাংলাদেশ কেবল পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। দেশটিতে ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের থেকেও ভয়াবহ। এ বছর ফ্রিডম হাউসের ইন্টারনেট স্বাধীনতা সূচকে পাকিস্তান পেয়েছে মাত্র ২৬ পয়েন্ট। ফলে দেশটির ইন্টারনেটকে ‘নট ফ্রি’ বা মুক্ত নয় শ্রেণিতে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে থাকলেও ভারত ও শ্রীলঙ্কার থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। সূচকে শ্রীলঙ্কার স্কোর ৫২ এবং ভারতের স্কোর ৫০।

ফ্রিডম হাউসের রিপোর্টে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট স্বাধীনতা টানা ১৩ তম বছরের মতো হ্রাস পেয়েছে। কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলেছে, এ বছর বিশ্বের ২৯টি দেশে ইন্টারনেট স্বাধীনতার অবনতি হয়েছে এবং ২০টিতে উন্নতি হয়েছে। আইসল্যান্ড টানা পঞ্চম বছরের মতো ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সবথেকে স্বাধীন দেশের গৌরব অর্জন করেছে। এরপরে রয়েছে এস্তোনিয়া। অপরদিকে টানা নয় বছর ধরে ইন্টারনেট স্বাধীনতায় সবার পেছনে রয়েছে চীন। তবে এ বছর চীনকে প্রায় ধরে ফেলেছে মিয়ানমার।