তাইওয়ানে কিভাবে যুদ্ধ করছে চীন!

তাইওয়ানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে চীন। গত মাসেই চীন ও তাইওয়ানের মধ্যবর্তী ‘আনঅফিসিয়াল বর্ডার’ অতিক্রম করে রেকর্ড সংখ্যক চীনা যুদ্ধবিমান। বেইজিংয়ের দাবি, এমন কোনো বর্ডার নেই তাদের মধ্যে। তাইওয়ানের খুব কাছ দিয়ে ১০৩টি যুদ্ধবিমান উড়ে যায়। এর মধ্যে স্বঘোষিত দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে (এডিআইজেড) প্রবেশ করে ৪০টি যুদ্ধবিমান। একে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীনের যুদ্ধ হিসেবে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে গ্রে জোনে কিভাবে লড়াই করছে চীন এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অনলাইন বিবিসি।
এতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানকে নিজেদের নিজস্ব ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে বেইজিং। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সহ চীনের শীর্ষ নেতারা বার বার বলেছেন, তারা প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করবেন। এরপর থেকেই কিছুদিন যাবত এই দ্বীপরাষ্ট্রটির চারপাশে চীনের যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধজাহাজ মহড়া দিচ্ছে। তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্দেশ্যেই এমনটা করা হচ্ছে বলে মনে করা হয়।

তবে এখনও তারা অনুপ্রবেশ বা আগ্রাসন চালায়নি। ‘গ্রে জোনেই’ অবস্থান করছে।
বর্তমান সময়ে তাইওয়ান ইস্যু এক অস্থিরতাকে নির্দেশ করে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক আরও অস্থির করে তুলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ‘গ্রে জোনে’ যে কৌশল নিয়েছে তা একটি গুলি না ছুড়েই তাইওয়ানকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার বেইজিংয়ের কৌশলের অংশ। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে ‘গ্রে জোন’ কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। তাইওয়ানের সঙ্গে চীন আসলে এটাই করার চেষ্টা করছে। লন্ডনের কিংস কলেজের পূর্ব এশিয়ায় যুদ্ধ ও কৌশল বিষয়ক প্রফেসর অ্যালেসিও পাটালানো বলেছেন, তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চল নিয়মিতভাবে অতিক্রম করে তাইপেকে পরীক্ষা করছে বেইজিং।

আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চল হলো একটি স্বঘোষিত ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের এলাকা। কিন্তু সরকারগুলো সাধারণত বিদেশি বিমান চলাচল মনিটরিংয়ের জন্য এটাকে ব্যবহার করে। এই অঞ্চলে চীনের যুদ্ধবিমানকে সতর্ক করতে নিয়মিত যুদ্ধবিমান পাঠায় তাইওয়ান। প্রফেসর পাটালানো বলেন, এমন প্রতিক্রিয়া দেখানো দীর্ঘ মেয়াদে তাইওয়ানের উৎসে টান ধরাবে।
বিশ্লেষকদের মতে, মহড়ার মধ্য দিয়ে চীন তার নিজের সক্ষমতা পরীক্ষা করছে। এর মধ্যে আছে তাদের মধ্যকার সমন্বয় এবং নজরদারি। দ্বিতীয়ত এর মধ্য দিয়ে তারা তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর ওপর ক্রমশ চাপ সৃষ্টি করছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের পরীক্ষা করে তারা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল ব্যুরো অব এশিয়ান রিসার্চের অনাবাসিক ফেলো ডেভিড গিটার বলেন, এভাবে মহড়া স্বাভাবিকীকরণের মধ্য দিয়ে একদিন হয়তো বাস্তবেই তাইওয়ানে আক্রমণ করে বসবে চীন। ফলে তাইওয়ান ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত হওয়ারও সময় পাবে না।

বেইজিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো তাইওয়ানকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করানো। তাইওয়ান দাবি করে চীনের সঙ্গে তাদের সীমান্ত আছে তাইওয়ান প্রণালীতে। এই অঞ্চল তাইওয়ান ও চীনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যবর্তী অঞ্চলে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, এই প্রণালীতে কথিত কোনো মধ্যরেখা নেই। ফলে এমন একটি শক্তির পক্ষ থেকে আসা হুমকির বিষয়ে তাইওয়ানের জনসাধারণকে দুর্বল করে দেয়, যে শক্তি সম্ভাব্য একটি যুদ্ধে প্রস্তুতির জন্য তাইওয়ানের সেনাবাহিনীর প্রতি রাজনৈতিক সমর্থনকে খর্ব করতে পারে।

বেশির ভাগ বিশ্লেষক একমত যে, তাইওয়ানের সেনাবাহিনী হলো সংকুচিত সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর সংখ্যা অনেক বেশি এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র সব পুরনো। সেক্ষেত্রে চীন অধিক শক্তিধর। তাদের বিরুদ্ধে তাইওয়ানের এই সেনাবাহিনী দাঁড়াতে পারবে না। একই কথা বিশ্বাস করেন বহু তাইওয়ানিজ। গত বছর তাইওয়ান পাবলিক অপিনিয়ন ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এমনটাই দেখা গেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের সামান্য বেশি সংখ্যক মনে করেন, যদি যুদ্ধ হয় তাহলে জয়ী হবে চীন। আর এক তৃতীয়াংশ মনে করেন জয়ী হবে তাইওয়ান।

সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যাম পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, সেখানে বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেটের আগ্রহ দুর্বল বলে মনে হয়। প্রায় অর্ধেক মানুষ মনে করেন বর্তমানে এ খাতে যে অর্থ দেয়া হয় তা পর্যাপ্ত। এক তৃতীয়াংশ মনে করেন এই খরচ অতিরিক্ত।