হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার সাত বছর

    ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে সাত বছর আগের এই দিনে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা এটি। ২০১৬ সালের ১লা জুলাই ভয়াবহ সেই জঙ্গি হামলায় নিহত হন ২২ হন, যাদের সতের জনই বিদেশি। ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে সেই সঙ্কটের অবসান ঘটে।

    নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, তিনজন বাংলাদেশি ও একজন ভারতীয় ছিলেন। হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা যে নৃশংস কায়দায় মানুষ হত্যা করে, তাতে স্তম্ভিত হয়েছিল পুরো জাতি।

    জঙ্গিদের হাতে জিম্মি অবস্থা থেকে মানুষজনকে মুক্ত করতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। তাঁরা হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ও বনানী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান।

    ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে জঙ্গিরা রেস্তোরাঁয় প্রবেশের পরপরই ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। প্রথম দফায় জিম্মি নাগরিকদের মুক্ত করতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। হামলার ভয়াবহতা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় সেখানে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি, নেভি কমান্ডো ও সেনাবাহিনী যুক্ত হয়। রাতভর জঙ্গিরা গুলি করে ও কুপিয়ে রেস্তোরাঁয় আসা অন্তঃসত্ত্বা নারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, উন্নয়ন সহযোগী বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে। সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে পরদিন সকালে সমাপ্ত হয় ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মিদশার।

    অভিযানে সরাসরি হামলায় জড়িত পাঁচ জঙ্গি নিহত হন।
    তাঁরা হলেন রোহান ইমতিয়াজ, সামিউল মোবাশ্বির, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও খায়রুল ইসলাম। তাঁদের মধ্যে প্রথম তিনজন উচ্চ ও উচ্চমধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারের সন্তান।
    হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। হামলাকারী পাঁচজনকে তাদের ‘সৈনিক’ বলেও দাবি করে জঙ্গি সংগঠনটি। তবে সরকার আইএসের এই দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেছে, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি এই হামলার জন্য দায়ী।

    দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। বিচারিক কার্যক্রম শুরুর এক বছরের মধ্যেই গত ২৭ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে মামলার আট আসামির সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।