জামালখানে ভাংচুর বিএনপি নেতাকর্মীরা নয়, তারা করেছে

লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে ডা. শাহাদাত হোসেন

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে ম্যুরাল ভাংচুরের ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়িত নয়। ভিডিও ফুটেজে আমরা দেখেছি আমাদের যেসকল নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে তাদের কেউ ভিডিও ফুটেজ সেখানে ছিলো না। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার যে চিন্তা আপনারা করছেন সেটা আমরা হতে দেবো না। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হামলা বন্ধ না করলে আমরা হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে নগরীর কাজীর দেউড়ির নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহম্মেদ সড়কে অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

পদযাত্রাটি কাজীর দেউরী নূর আহম্মদ সড়ক থেকে শুরু করে জুবিলী রোড় হয়ে তিন পোলের মাথায় গিয়ে শেষ হয়।

ম্যুরাল যুবলীগের নেতাকর্মীরাই ভাংচুর করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, গত বুধবার আমরা তারুন্যের সমাবেশ করেছি। সে সমাবেশে নানা জায়গা থেকে নেতাকর্মীরা যোগ দিতে এসেছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজ, জামালখানের সামনে যুবলীগ ছাত্রলীগের ক্যাডাররা কেন দাঁড়িয়ে ছিলো? ওটা তো তাদের সমাবেশ ছিলো না। আমাদের সমাবেশ ছিলো।আমরা সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছি। আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করা হয়েছে, ঢিল মারা হয়েছে, লাঠিচার্জ করে আঘাত করা হয়েছে। যুবলীগের দুই গ্রুপের নেতাদের অস্ত্রের মহড়া হয়েছে। তারা সেখানে জামালখানের দেয়াল ভাংচুর করেছে।

তিনি আরও বলেন, একটি সরকার যখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না তখন জনগণের কোনো দাবির দিকে তাদের খেয়াল থাকে না। তাদের খেয়াল থাকে শুধু যেনতেন ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। প্রয়োজনে তারা রাষ্ট্রযন্ত্র যারা চালাচ্ছে তাদের পেছনে টাকা খরচ করবে। কিন্তু ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাবে না। যদিও বিদ্যুৎ এর জন্য কুইক রেন্টালের নামে কুইক পদ্ধতিতে টাকা তারা পাচার করে দিয়েছে। ক্যাপাসাটি চার্জের নামে কুইক রেন্টালের ব্যবসায়ীরা প্রচুর পরিমানে টাকা বিনিয়োগ করেছে বিদেশী সহযোগিতায়।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। কেনো বন্ধ হয়ে গেছে জানেন? মাত্র কয়লার ৩০ কোটি ডলার দেনা শোধ করতে পারেনি। তারা বলছে তাদের ব্যংকে নাকি টাকার অভাব নেই। আবার তারা আইএমএফ থেকে লোন খুঁজে। মেগা বাজেটে যে সাত লাখ কোটি টাকার অংক পেশ করেছে সেটাও আইএমএফের প্রেসকিপশনে তারা করেছে।

বাজেটের ঘাটতির টাকা জনগণের পকেট থেকে নেওয়া হবে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, বাজেটে ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকার যে ঘাটতি এই টাকা জনগনের পকেট থেকে তারা নেবে। ইতিমধ্যে তারা করের নামে যাদের TIN সার্টিফিকেট আছে তাদের থেকে দুই হাজার টাকা করে ট্যাক্স নেবে।

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যারা লালন পালন করছে তাদের লিস্ট করা হচ্ছে জানিয়ে শাহাদাত বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আপনারা আমাদের নেতাদের ধর পাকড় করছেন, নির্যাতন করছেন, সাধারন মানুষকে হয়রানী করছেন। চাঁন্দগাওয়ের যুবদল নেতা নওশাদ নামে একজনকে হাতে অস্ত্র দিয়ে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করেছেন। শামীম নামে একজনকে মারধর করা হয়েছে। যদি মামলার আসামি হয় তাহলে আপনি গ্রেফতার করতে পারবেন। কিন্তু তাকে মারার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? গায়ে হাত তোলার অধিকার কেউ আপনাদের দেয়নি। সবার নামের লিস্ট করা হচ্ছে। যারা ওই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের লালন পালন করছেন। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ডা. শাহাদাত বলেন, প্রশাসনকে বলবো আইনের শাসক হিসেবে সবাইকে সমান চোখে আপনাদের দেখতে হবে। যারা চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজে আমাদের নেতাকর্মীদের মাথা ফাঁটিয়েছে তারা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিপ্লব উদ্যানে জিয়াউর রহমানের নাম কালি দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। জিয়া জাদুঘরে জিয়াউর রহমানে ম্যুরালে কালো কাপড় দিয়ে ডেকে দেওয়া হয়েছিলো। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তমের প্রতি যে অবমাননা করছেন সেটার প্রতিশোধ জনগণ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে আপনাদের বিদায়ের ঘন্টা বাজিয়ে দেবে।

কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, জনগণের পকেট থেকে এই স্বৈরাচারী সরকার টাকা কেড়ে নিতে চায়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়া সরকার জনগণকে বিদ্যুৎ পানি গ্যাস দিতে পারছে না, ভাত, কাপড়, চিকিৎসা, শিক্ষা কিছুই দিতে পারছে না। তারা মানুষের ভোটের অধিকার, মানবাধিকার, আইনের শাসন হরণ করেছে।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, আপনারা যারা সরকার চালান তারা মাফিয়া। পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই চট্টগ্রাম কলেজে আমাদের ভাইদের ওপর হামলা চালিয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। কই আপনারা তো কোনো মামলা নেননি। যারা হামলার শিকার হয়েছে উলটো তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।মামলা করেন। সমস্যা নেই। বিএনপির নেতাকর্মীরা এসব মামলা, হামলা ভয় পায় না। কোনো লাভ হবে না। আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। কারা মামলা করছে, কারা মামলা নিচ্ছে এর তালিকা আমরা প্রকাশ করবো। সাবধান হয়ে যান। আমরা আপনাদের সাথে ভালো আচরণ করতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা চাই।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার আবার নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে। তারা শুধু নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেনি, দুর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ নিয়ে যে ঢাকঢোল পিটিয়েছে, সেটা এখন কোথায়? আজ সারাদেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি আন্দোলন করছে। এতেই সরকার আতঙ্কিত হয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কিন্তু যতই চক্রান্তের জাল ফেলা হোক না কেন, এই অবৈধ সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না। মামলা দিয়ে, সাজা দিয়ে, চক্রান্ত করে জনগণকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিদায় নিতে হবেই।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, এড. আবদুস সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, আহবায়ক কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন জিয়া, হারুন জামান, এস এম আবুল ফয়েজ, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আবুল হাশেম, আনোয়ার হোসেন লিপু, মন্জুর আলম চৌধুরী মন্জু, মো. কামরুল ইসলাম, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি, সাধারণ সম্পাদক জেলী চৌধুরী, থানা বিএনপির সভাপতি মামুনুল ইসলাম হুমায়ুন, মো. আজম, আবদুস সাত্তার সেলিম, হাজী মো. সালাউদ্দীন, আবদুল্লাহ আল হারুন, ডা. নুরুল আবছার, এম আই চৌধুরী মামুন, থানা সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জিয়া, মনির আহম্মেদ চৌধুরী, আবদুল কাদের জসিম, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি তাহের আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম সরকার, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম প্রমুখ।