পিটিআই নেতাদের দল ত্যাগকে ‘জোরপূর্বক তালাক’ বললেন ইমরান খান

পিটিআই নেতাদের গণহারে দল ত্যাগকে ‘জোরপূর্বক তালাক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন দলটির চেয়ারম্যান ইমরান খান। মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। ওইদিনই দল ত্যাগ করেন পিটিআই’র সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট শিরীন মাজারি। এরপরই এই টুইট করেন খান।

খবরে বলা হয়, গত ৯ই মে দেশব্যাপী যে দাঙ্গা হয়েছিল সে সংক্রান্ত মামলার চাপেই শিরীন মাজারি পদত্যাগ করেছেন বলে প্রচার করছে পিটিআই। যদিও মাজারি নিজে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। আর ইমরান খান বলছেন, নেতাদের ওপর চাপ দিয়ে তাদের দল ত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এক টুইটে খান বলেন, আমরা এতদিন পাকিস্তানে জোরপূর্বক বিয়ের কথা শুনেছি। কিন্তু এখন পিটিআই এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি যাকে বলা যেতে পারে ‘জোরপূর্বক তালাক’।

পিটিআই কর্মীরা শুধুমাত্র সরকারি ভবনই নয়, রাওয়ালপিন্ডিতে জেনারেল হেডকোয়ার্টার সহ সামরিক স্থাপনায়ও হামলা চালিয়েছে। মূলত এই কারণটিকে সামনে এনেই বেশিরভাগ পিটিআই নেতা দল ত্যাগ করেছেন।

এরইমধ্যে প্রায় দুই ডজন শীর্ষ নেতাকে হারিয়েছে পিটিআই। এই দলে সর্বশেষ যোগ দিয়েছেন মাজারি। তবে তিনি পিটিআই-এর ‘সহিংসতার নীতি’কে দায়ী না করে নিজের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা বলেছেন।
পিটিআই দাবি করছে যে, রাজনৈতিক চাপের মুখেই পদত্যাগ করছে তাদের দলের নেতারা। ইমরান খান টুইটারে বলেন, আমি ভাবছি দেশের সব মানবাধিকার সংস্থা কোথায় হারিয়ে গেছে! সম্প্রতি যখন তার দলের নেতারা দল ছাড়া শুরু করেন তখন তিনি বলেছিলেন যে, যারা চাপের মুখে পিটিআই ছাড়লেন তাদের জন্য আমি সহানুভূতি প্রকাশ করছি। আমার সহানুভূতি তাদের সকলের প্রতি যারা চাপের মুখে দল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। আমি সকল সিনিয়র সদস্যদের প্রশংসা ও অভিনন্দন জানাই যারা পার্টি ছাড়ার চরম চাপ প্রতিরোধ করছেন।

২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান শাসন করেছে পিটিআই। গত বছর ক্ষমতাচ্যুত করা হয় পিটিআই সরকারকে। তবে গত ৯ই মে দেশব্যাপী সহিংসতার পর রাজনৈতিক ইতিহাসের সবথেকে কঠিন সময় পাড় করছে পিটিআই। শীর্ষ নেতারা অনেকেই বন্দী হয়ে আছেন। ইমরান খান নিজেও যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন। অপরদিকে দাঙ্গার সাথে জড়িত দলের হাজার হাজার কর্মীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ওইদিন হামলার সাথে জড়িত অপরাধীদের প্রতি কোনো ধরনের নমনীয়তা দেখানো হবে না। সামরিক বাহিনী ৯ই মে’কে ‘কালো দিবস’ হিসেবে অভিহিত করেছে। সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনীর আরও বলেছেন যে, ৯ই মে’র ঘটনার সাথে জড়িত পরিকল্পনাকারী, উসকানিদাতা, প্ররোচনাদাতা এবং অপরাধীদের পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্ট এবং অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের অধীনে বিচার করা হবে।

গত কয়েক দিনে পিটিআই ছেড়েছেন এমন নেতারা হচ্ছেন, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিরীন মাজারি, প্রাক্তন প্রাদেশিক মন্ত্রী ফায়াজুল হাসান চোহান, সাবেক এমপিএ (পাঞ্জাব) আব্দুল রাজ্জাক খান নিয়াজী, সাবেক এমপিএ (পাঞ্জাব) মাখদুম ইফতিখারুল হাসান গিলানি, সাবেক এমপিএ (পাঞ্জাব) মিয়া জলিল আহমেদ শরকপুরী, খাজা কুতুব ফরিদ কোরেজা, পিটিআইর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আমের মাহমুদ কিয়ানি, চৌধুরী ওয়াজাহাত হোসেন, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মালিক আমিন আসলাম, প্রাক্তন প্রাদেশিক মন্ত্রী হিশাম ইনামুল্লাহ মালিক, পিটিআই পশ্চিম পাঞ্জাবের সভাপতি ফয়জুল্লাহ কামোকা, ইসলামাবাদের প্রাক্তন পিটিআই কেন্দ্রীয় ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আমজাদ, সিন্ধু পিটিআইর সহ-সভাপতি মেহমুদ মৌলভী, করাচির পিটিআই সভাপতি আফতাব সিদ্দিকী, এমপিএ (সিন্ধু) সৈয়দ জুলফিকার আলী শাহ, এমএনএ জয় প্রকাশ, এমপিএ (সিন্ধু) সঞ্জয় গাংওয়ানি, এমপিএ (সিন্ধু) ইমরান শাহ, কেপি সরকারের সাবেক মুখপাত্র আজমল ওয়াজির, এমএনএ উসমান তারাকই, এমএনএ মালিক জাওয়াদ হোসেন এবং প্রাক্তন প্রাদেশিক মন্ত্রী মুবিন খিলজি।