ভেতরে ভেতরে বিএনপি আগুন সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে

শান্তি সমাবেশে ওবায়দুল কাদের
বিএনপি আবার পদযাত্রা শুরু করেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এটা কি পদযাত্রা নাকি অন্তিম যাত্রা? উপরে তারা দেখাচ্ছে আমরা নরম, ভেতরে ভেতরে বিএনপি আগুন সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল
কাদের। তিনি বিদেশি বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিএনপি যতোই নালিশ করুক না কেন। আমি আশ্বস্ত করছি দেশে একটা নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ঐতিহাসিক নির্বাচন হবে।

গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অপরাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে- শান্তি সমাবেশ’র আয়োজন করা হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আয়োজিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি গুলশানে একটা গুজবের কারখানা করেছে। বিদেশ থেকে অনলাইনে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই গুজবের কারখানা বন্ধ করতে হবে। তারা সারাদিন মাইকে মিথ্যাচার করছে। আরেক মিথ্যাচারের ফ্যাক্টরি নয়া পল্টন। তারা বিদেশে লবিং করছে, ষাড়যন্ত্র করছে।

তাদের মূল কথা শেখ হাসিনাকে হটাবে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ শেখ হাসিনার উন্নয়নে মুগ্ধ। যদি মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন কাকে ভোট দেবেন? তারা বলবে যারা রাস্তা করেছে, বিদ্যুৎ দিয়েছে, যে উপজেলায় উপজেলায় ডিজিটাল সেন্টার দিয়েছে তাকে ভোট দেবো। যে পদ্মা সেতু করেছে তাকে ভোট দেবো। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে এটা শেখ হাসিনা জানে। বিশ্বে কয়েকটা যুদ্ধ চলছে। তিনি বিভিন্ন দেশের মুদ্রাস্ফীতির হার উল্লেখ করে বলেন- সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে।

সেতুমন্ত্রী বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন তিন ঘণ্টা ঘুমান। এইরকম প্রধানমন্ত্রী যেদেশে সে দেশে আন্দোলনের ডাক দেয়া যাবে। লোকজন পাওয়া যাবে না। মানুষ জানে শেখ হাসিনা সৎ। তার পরিবারের লোকজনরা চাকরি করে খায়। তাদের হাওয়া ভবন নির্মাণ করার কোনো ইচ্ছা নাই।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যতো লাফালাফি করবেন করেন কিন্তু মনে রাখবেন আন্দোলনের সময় কিন্তু শেষ। মানুষ বুঝে গেছে বিএনপি কোমর ভাঙা দল। তারা জানে বিএনপি নির্বাচনে গেলে শেখ হাসিনার ধারে কাছেও যেতে পারবে না। তাদের আন্দোলনের নেতা নাই। কাকে নিয়ে ভোট করবেন? তাদের ভোট করার লোক নাই। তিনি বলেন, অস্ত্র উঁঁচিয়ে, বোমা মেরে, পেট্রোল বোমার চর্চা আর করা যাবে না এই দেশে। জনগণ রুখে দেবে। খেলা হবে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে খেলা হবে। খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে। যারা এদেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।

মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যারা রাস্তা বন্ধ করে পদযাত্রা করছে জনগণ তাদের প্রতি বিরক্ত। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, ফাইনাল খেলা। এখন যেগুলো হচ্ছে এগুলো ফাইনাল খেলা নয়। আসল খেলা হবে আরও পরে। আবার যদি মানুষ পোড়াতে আসেন। সেই হাত আমরা পুড়িয়ে দেবো। যে হাতে বিএনপি ভাঙচুর করবে সেই হাত আমরা ভেঙে দেবো।

শান্তি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফি। সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. হুমায়ুন কবির। শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে দুুপুর থেকেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যোগ দিতে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠান স্থলে ব্যাপক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা দলীয় সেøøাগানে সেøাগানে মুখর করে রাখেন শান্তি সমাবেশ। এ সময় তারা ব্যানার, পোস্টারসহ সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন।
আনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.খ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি জামায়াত যে অপরাজনীতি করে। তারা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। তারা আফগানিস্তানের মতো করতে চায়। এই অপরাজনীতিকে রুখে দিতে হবে। আমরা প্রতিজ্ঞা করছি, যেকোন মূল্যে আমরা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো, আমরা সফল করব। সেখানে মানুষ ভোট দিতে আসবে, সাধারণ জনগন নির্ভয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। বিএনপি যদি নির্বাচন ভণ্ডুল করার পাঁয়তারা করে আমরা অঙ্গীকার করে বলছি, আমরা তা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করবো। কারণ আমরা জানি তোমাদের নির্বাচন করার শক্তি নাই। তোমরা দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী একটা দল। তোমরা বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে পারো আমরা রুখে দিতে প্রস্তুত আছি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। আমরা যদি বিএনপি’র হামলা-মামলার খতিয়ান দিতে চাই তবে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীদের শত শত মামলা দিয়েছেন, হামলা করেছেন। আজ ১৫ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। বিএনপি নেতারা নিরাপদে বাড়িতে ঘুমান, ব্যবসা করেন। আবার আন্দোলন-সংগ্রামও চালিয়ে যাচ্ছেন, কেউ কিছু বলে না। তারা আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্র শেখান। আপনার দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছে। সায়েম সাহেবের বুকে অস্ত্র ধরে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করেছে। সেই দল আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্র শেখায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা দেখেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করছেন, কোনো লাভ নেই।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ, বাংলাদেশ শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সকল দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। দু’দিন আগেও বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনার উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে। যখন সারা বিশ্ব শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তখন বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়, সমৃদ্ধি চায়। তাই তারা শেখ হাসিনাকে চায়।

কৃষিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে ভিত্তি স্থাপন করেছে তা দিয়ে উন্নয়নের শিখরে উঠবে। এটি যারা মানতে পারছে না তারা চায় বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে। তারা বারবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এই উন্নয়নের ধারা যারা ব্যাহত করতে চান তাদের বলবো গত ১৫ দিনে পত্র-পত্রিকা দেখেন। পাকিস্তানের কি অবস্থা দেখেন। পাকিস্তানের অর্থনীতি ধ্বংস। আমরা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে দেবো না।
শান্তি সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।