বিমানের এয়ারবাস কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

গত বছর ২৮ হাজার টনের কিছু বেশি মালামাল পরিবহন করেছে ‘বিমান’। যদিও এর পরিবহন সক্ষমতা ছিল ৪.৯৮ লাখ টনের বেশি। সক্ষমতার মাত্র ৬ শতাংশ ব্যবহার করার পরও ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস থেকে দুটি নতুন কার্গো উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছে বিমান। এমন অবস্থায় বিমানের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কী যুক্তি রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে ইংরেজি ভাষার দৈনিক সংবাদপত্র ডেইলি স্টার।

এতে বলা হয়েছে, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি) এর একটি নিরীক্ষায় দেখা যায়- গত বছর আন্তর্জাতিক রুটে ২০.৫৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে বিমান। এসব ফ্লাইটে প্রায় ৭ লাখ আসন খালি ছিল, যা বিমানের যাত্রী বহন সক্ষমতার প্রায় ২৪ শতাংশ। জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ১২টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনে। এসব উড়োজাহাজের মধ্যে রয়েছে একাধিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, বোয়িং ৭৮৭-৮ এবং -৯ এবং বোয়িং ৭৩৭-৮০০। পাইলটসহ অন্যান্য জনবলের ঘাটতি এবং দুর্বল পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার কারণে উড়োজাহাজগুলোর সঠিক ব্যবহার হয়নি। উড়োজাহাজগুলোর সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবহারে নতুন রুট চালু করতেও ব্যর্থ হয়েছে বিমান।

ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বিমানের অযোগ্যতা ইতিমধ্যে একাধিক ঘটনায় যাত্রীদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে এবং সমগ্র জাতিকে বিব্রত করেছে। তাহলে কেন এই সমস্যাগুলো সমাধান এবং বিদ্যমান বিমানগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার পরিবর্তে আরও বেশি বিমান কেনার দিকে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে? বিমান কি কোনো গবেষণা করে দেখেছে যে, তাদের এই সিদ্ধান্ত লাভ জনক হবে এবং শেষ পর্যন্ত আরও বড় লোকসান বয়ে আনবে না? এই লোকসানের বোঝা দেশের সাধারণ করদাতাদের উপর উঠে আসবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানের এই সিদ্ধান্তটি অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর নয়।

উড়োজাহাজে পণ্য পরিবহণ বাংলাদেশে একটি মৌসুমি ব্যবসা। মূলত তৈরি পোশাক ও সবজি রপ্তানি হয় কার্গো বিমানে। বছরের পাঁচ-ছয় মাস প্রায় কোনো চাহিদাই থাকে না। এটা প্রথম সমস্যা। দ্বিতীয়ত, বেশিরভাগ রপ্তানি পণ্য যায় পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এবং বাংলাদেশ আমদানি করে মূলত চীন, হংকং ও জাপান থেকে। এর ফলে রপ্তানি পণ্য নিয়ে যাওয়া কার্গো বিমানগুলো ফাঁকা অবস্থায় দেশে ফিরে। অন্যদিকে যেসব জায়গা থেকে আমদানি পণ্য আসে সেখানেও পাঠাতে হয় ফাঁকা উড়োজাহাজ।
তাছাড়া, বিমানকে নতুন কোম্পানির উড়োজাহাজের জন্য ককপিট, কেবিন ক্রু এবং প্রকৌশলীদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আর এজন্য দরকার হবে প্রচুর অর্থের। ফলে আবারও প্রশ্ন উঠছে যে, এরইমধ্যে বিমান যেসব সমস্যাগুলির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা সমাধানে বিমান কী করছে!

ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বিমান তাড়াহুড়া করে এই উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন বহু বিষয় রয়েছে যার দিকে বিমানের নজর দেয়া প্রয়োজন। এরমধ্যে আছে, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অব্যবস্থাপনার মতো পদ্ধতিগত সমস্যাও। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বাহী সংস্থাটি অনেক উঁচুতে নিজের অবস্থানকে উন্নীত করবে এটাই সবার আশা। তবে এর শুরু করতে হবে বিমানের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি সমাধানের মধ্য দিয়ে।