হাতের কব্জিতে ব্যথা

কব্জি হলো একটি জটিল সন্ধি যা কয়েকটি হাড়ের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে। যেমন রেডিয়াস ও আলনা হাড়ের নিম্নাংশ এবং ৮টি ছোট ছোট কারপাল হাড়। কারপাল হাড়গুলো দুই সারিতে সাজানো। লিগামেন্টের শক্তব্যান্ড কব্জির হাড়গুলোকে একে অন্যের সঙ্গে, রেডিয়াস ও আলনা হাড়ের নিম্নাংশ এবং হাতের হাড়গুলোকে সংযুক্ত করে। টেনডনগুলো হাড়ের সঙ্গে মাংসপেশিকে সংযুক্ত করে। কব্জির যেকোনো অংশ ক্ষতিগ্রন্ত হলে ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া হাত ও কব্জির ব্যবহারের সক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময় কব্জির ব্যথার কারণে হাতের দ্বারা স্বাভাবিক কাজ করতে সমস্যা হয়। চিকিৎসা না করালে সমস্যা আরও জটিল হয়। তাই কব্জির ব্যথাকে মোটেও অবহেলা নয়।

কারণসমূহ: হঠাৎ আঘাতের জন্য কব্জিতে বেশি ব্যথা হয়ে থাকে।

এ ছাড়া মচকে গেলে, হাড় ভেঙে গেলে কব্জিতে ব্যথা হতে পারে। অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে কব্জিতে প্রচ- চাপ, বাত ও কারপাল টানেল সিনড্রোমের কারণে ব্যথা হয়ে থাকে। হাতের উপর ভর দিয়ে সামনের দিকে পড়ে গেলে কব্জি মচকে যায়, কব্জিতে টান পড়ে এবং কব্জির হাড় ভেঙে ব্যথা হতে পারে। দেখা যায় কব্জিতে অস্টিও আর্থ্রাইটিস খুব কম হয়। তবে কোনো লোকের কব্জিতে আগে ইনজুরি হয়ে থাকলে পরে অস্টিও আর্থ্রাইটিস হয়। এ ক্ষেত্রে তরুণাস্থি ছিঁড়ে যায় বা অনেকসময় ক্ষয় হয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হাত ও কব্জির যেকোনো কাজ বারবার করলে কব্জির ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। আর বোলিং, গলফ, হ্যান্ডবল খেলা, জিমন্যাস্টিক, টেনিস, এমনকি কব্জিতে প্রচুর শক্তি সঞ্চয় করে কাজ করলে ব্যথা হতে পারে।

চিকিৎসা: কব্জির ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে ইনজুরি বা আঘাতের ধরন, স্থান ও তীব্রতা, বয়স ও রোগীর স্বাস্থ্যের উপর। কব্জির ব্যথা হলে শুরুতে যে কাজটি করতে হবে তা হলো কব্জিকে বিশ্রাম রাখা বা কব্জিতে যাতে কোনো চাপ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখা। এই অবস্থায় যে হাতে ব্যথা ওই হাত দিয়ে কোনো কাজ না করাই উত্তম। আক্রান্ত হাতের কব্জিকে নড়াচড়া থেকে রক্ষা করার জন্য রিস্ট ব্যান্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। আর কোনো নির্দিষ্ট রোগের কারণে কব্জিতে ব্যথা হয়ে থাকে, তা হলে তার চিকিৎসা নিতে হবে। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই কব্জির ব্যথা উপশমে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন রয়েছে। যদি মারাত্মকভাবে হাড় ভেঙে যায়, কারপাল টানেল সিনড্রোমের উপসর্গ তীব্র হয় এবং টেনডন বা লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে অপারেশনের প্রয়োজন হয়।

লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।