পাঁচ দশক পর চাঁদে অভিযান চালাচ্ছে মানুষ

১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে মানব সভ্যতা যেনো এক লাফে কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিল। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে চাঁদের বুকে নেমেছিলেন দুই নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং আর এডউইন অলড্রিন। ওই মিশনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেশ কয়েকটি মিশন পাঠানো হয় চাঁদে, যার সবগুলিতেই ছিল মানুষ। যদিও ১৯৭২ সালেই যেনো মানুষের চাঁদ দিয়ে আগ্রহে ভাঁটা পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় চন্দ্রাভিজান। তবে এবার নাসার এক ঘোষণার পর আবারও চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে। মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি পুনরায় চাঁদে মানুষ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি কারা কারা চাঁদে যাচ্ছে তার নামও প্রকাশ করা হয়েছে সংস্থাটির তরফে।

বিবিসি জানিয়েছে, নাসার এই নভোচারী দলটি যদিও চাঁদের বুকে নামবে না। কিন্তু তাদের এই মিশন পরবর্তী কোন একটি দলের চাঁদে অবতরণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এবারের অভিযানে নভোচারী বাছার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য নিশ্চিত করেছে নাসা।

প্রথম চন্দ্রাভিযানে ও শেষ অভিযানেও নভোচারীরা সবাই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ। কিন্তু এবারের চারজনের দলটিতে বিরাট এক পরিবর্তন এসেছে। এতে আছেন একজন নারী (ক্রিস্টিনা কখ) আর একজন কৃষ্ণাঙ্গ নভোচারী (ভিক্টর গ্লোভার)। এছাড়া বাকি দুজন হলেন শেতাঙ্গ পুরুষ রিড ওয়াইজম্যান আর জেরেমি হ্যানসেন। এই দলটির তিনজন মার্কিন নাগরিক আর একজন ক্যানাডিয়ান। সোমবার টেক্সাসের হিউস্টনে এক অনুষ্ঠান করে দলটির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। একটি ক্যাপসুলে করে তারা চাঁদ প্রদক্ষিণ করবেন। ২০২৪ বা ২০২৫ সালের কোন এক সময় এই অভিযান শুরু হবে।
গ্রিক পৌরাণিক সূর্যদেবতা অ্যাপোলোর যমজ বোনের নামে এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘আর্টেমিস-২’। এতে ব্যবহৃত হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। নাসা এ জন্য যে বিশেষ রকেট তৈরি করেছে তার নাম ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম’ বা এসএলএস। এতে সংযুক্ত থাকবে যে ক্যাপসুল বা মহাকাশযানটি তার নাম ‘ওরায়ন’। এই ওরায়নের মধ্যেই থাকবেন নভোচারীরা। গত বছর নভেম্বর মাসে আর্টেমিস ওয়ান এসএলএসের প্রথম রকেটটিকে পরীক্ষামূলক যাত্রায় পাঠানো হয়। ১০০ মিটার লম্বা এই রকেট ছিল নাসার তৈরি করা এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট। এতে ছিল ২৭ লক্ষ লিটার তরল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন জ্বালানি। এই রকেটটি ওরায়ন ক্যাপসুলকে চন্দ্রপৃষ্ঠের ৮০ মাইল দূরত্বে নিয়ে যায়।

আর্টেমিস-২ চন্দ্রাভিযান যদি ২০২৪ সালে হয়, তাহলে তার অন্তত ১২ মাস পরে চাঁদের বুকে আবার মানুষের পা ফেলার অভিযানটি হবে। সেটার নাম হবে আর্টেমিস-৩। আর্টেমিস-৩ অভিযানের নভোচারীরা যে যানটিতে করে চাঁদের মাটিতে নামবেন, তা এখন পরীক্ষামূলক পর্বে রয়েছে। নাসা নিজে এটি তৈরি করছে না। এটি তৈরি করছে ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্স কোম্পানি। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটির ফ্লাইট টেস্টিং শুরু হবে।