অটিজম শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে এমন একটি শিশু যে সব সময় আত্মমগ্ন থাকে; কারও সঙ্গে কথা বলে না, নিজের জগতেই নিজে বিচরণ করে। যার কোনো বন্ধু নাই, কারও চোখে চোখ রেখে কথা বলে না বা শোনে না; একই কাজ বার বার করতে থাকে। এদের অনেকে আবার কথাও বলতে পারে না। অনেকে কথা বলতে পারলেও সঠিকভাবে পারে না। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিতে চমৎকার ফলাফল পাওয়া যায়। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মাধ্যমে শিশুর নিউরোডেভেলপমেন্ট হয়। ফলে, শিশুদের মধ্যে আচরণের পরিবর্তন লক্ষণীয়। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুদের ইতিবাচক পরিবর্তনের সন্ধান দিতেই আজকের এই প্রবন্ধ। অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার: অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার এক ধরনের নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার; যেখানে অনেক ধরনের মানসিক সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা একসঙ্গে ঘটে। ফলে, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিপূর্ণ মানসিক বৃদ্ধি ঘটে না।
এ ধরনের নিউরোলজিক্যাল সমস্যায় মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়; যার সঙ্গে মানসিক বিকাশগত জটিলতাও প্রকাশ পায়।
এই সমস্যার কারণে জন্মের ১৮ মাস থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর আচরণগত এবং মানসিক সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়। ফলে, কথা বলা বা ঠিকমতো শব্দ উচ্চারণ করা, নতুন জিনিস বুঝতে পারা বা শেখা কিংবা সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা শিশুর জন্য বেশ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। অটিজমে কী ঘটে? অটিজমে আক্রান্ত শিশুর নিউরো- ডেভেলপমেন্ট বা মনোবিকাশের সমস্যা হয়। ব্রেনের নিউরোণসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে না পারায় শিশুর আচরণ, কথাবার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না। ব্রেন ডেভেলপ হয়ে পরিপূর্ণতা পেলে ব্রেনের নিউরোণসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করলে শিশুর আচরণ, কথাবার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিক হবে। চিকিৎসায় সফলতা: হোমিওপ্যাথিতে ‘অটিস্টিক শিশুদের’ ভালো মানের চিকিৎসা হচ্ছে। ‘অটিস্টিক শিশুদের’ সমস্যা যেহেতু ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ সেহেতু প্রয়োজন ‘নিউরো ডেভেলপমেন্ট’ চিকিৎসায় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। ঔষধ সেবনের ২ মাসের মধ্যেই শিশুদের বুদ্ধি, ধৈর্য, আই-কট্রাক্ট, শিশুর আচরণ, কথাবার্তা ইত্যাদি বিষয়ে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ ছাড়াও হাইপার শিশুদের আচরণেও পরিবর্তন আসে।
মাত্র ২ মাসের মধ্যে এ ধরনের পরিবর্তন অটিজম চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত সৃষ্টির ফলে অভিভাবকদের আস্থা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসা শুরুর পর শিশুর মানসিক উন্নতি হলে, পূর্বের তুলনায় মনোযোগী এবং নিজের কাজ নিজে করার আগ্রহ তৈরি হলে বুঝতে হবে চিকিৎসা সঠিক হচ্ছে। তবে, একথা স্মরণ রাখতে হবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। এই পরিবর্তন প্রথমদিকে ধীরে ধীরে হয় এবং শিশুর চিকিৎসাসেবা সম্পূর্ণ করতে দীর্ঘদিন লেগে যায়। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতা এবং ঝামেলামুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রমেই এই চিকিৎসার প্রতি রোগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়াও চিকিৎসার পাশাপাশি সঠিক খাদ্য ও কিছু ব্যায়ামের প্রয়োজন যা মস্তিষ্কের নিউরোণের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। অভিভাবকদের শিশুর অটিজম চিকিৎসায় আরও যত্নবান হয়ে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
লেখক: পিএইচ.ডি (স্বাস্থ্য), এম. ফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। গবেষক ও চিকিৎসক (ক্রণিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরোসাইকিয়াট্রিক ডিজঅর্ডার)। চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০ ৩১০