খাগড়াছড়ির বনে নীলপরী

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার এক নিভৃত পল্লীতে ‘নীলপরী’ পাখির সন্ধান মিলেছে। চিরসবুজ বনের এই পাখি সহজেই দেখা যায় না। দীঘিনালা থেকে অন্তত ২০ কিলোমিটর দূরে এক বুনো পাহাড়ে এশীয় নীলপরী পাখিকে দেখা গেছে। পাহাড়ের আশপাশে মানুষের বসতি নেই বলে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। সেসব পাখির অধিকাংশই দুর্লভ প্রজাতির।

বসন্তের সকালে মান্দার ফুলের মধুর খেতে বন থেকে উড়ে আসে। পাহাড়ের খাদে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে হঠাৎই পাহাড়ের চূড়ায় থাকা মান্দার গাছে পাখিটিকে দেখা যায়। এশীয় নীলপরি পাখির ইংরেজি নাম অংরধহ ঋধরৎু ইষঁবনরৎফ। বৈজ্ঞানিক নাম ওৎবহধ চঁবষষধ।

বাংলাদেশের পাখি ফিল্ডগাইড বইয়ের তথ্য অনুসারে, নীলপরি আকারে শালিকের মতোই। এদের দেহ নীল। ডানা ও লেজের প্রান্ত কালো। চোখ গাঢ় লাল। পা কালো। চঞ্চু কালচে। পুরুষের পুরো দেখ উজ্জ্বল বেগুনি–নীল এবং গাল ও দেহতল ঘোর কালো। স্ত্রী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পুরো দেহ অনুজ্জ্বল নীল–সবুজ। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের চিরসবুজ বনে মাঝে মাঝে দেখা যায়।’

এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৫ সেন্টিমিটার, ডানা ১৩ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.৯ সেন্টিমিটার, পা ১.৯ সেন্টিমিটার ও লেজ ১০ সেন্টিমিটার, স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির ডানা কালো। এছাড়া লেজ, গলা, বুকও কালো। কান–ঢাকনি এবং ঠোঁট ও চোখের মাঝের অংশ কালো। মাথার চাঁদি থেকে কোমর পর্যন্ত পিঠ উজ্জ্বল বেগুনি–নীল। ঠোঁট সোজা ও সীসা বর্ণের। স্ত্রী পাখির ডানার পালক কালচে ও ডানার প্রান্তদেশ নীলচে–ধূসর। এই অংশটুকু ছাড়া সারা দেহ অনুজ্জ্বল সবুজাভ–নীল রঙের। ঠোঁট কালচে বাদামি। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় পাখির চোখ গাঢ লাল। বন্য পরিবেশে এরা ১০–১২ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এশীয় নীলপরী চিরসবুজ ও আর্দ্র চিরসবুজ বনের পাখি। এরা বেশ লাজুক ও সতর্ক পাখি, মানুষের সংস্পর্শ থেকে বহু দূরে ঘন বন এদের প্রধান বিচরণস্থল। জানুয়ারি থেকে জুন মাস এদের প্রধান প্রজনন মৌসুম। ঘন ঝোপে গাছের চেরা ডালে বাসা করে। ঘন বনের অন্যসব পাখিরা যেখানে খোলা শুষ্ক অঞ্চলে বাসা করে, নীলপরী সেখানে বনের সবচেয়ে আর্দ্র ও ঘন এলাকায় বাসা করে। বাসা পেয়ালাকৃতির। ভূমি থেকে বাসার উচ্চতা ২ থেকে ৬ মিটার উঁচুতে হয়। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশজুড়ে এশীয় নীলপরীর বিচরণ। খাগড়াছড়ির শৌখিন আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা বলেন, এশীয় নীলপরি সচরাচর চোখে পরে না। এরা গভীর বনের বাসিন্দা। খাগড়াছড়িতে এর আগে এই পাখি দেখা যায়নি। পাহাড়ে এশীয় নীলপরি সন্ধান ইতিবাচক দিক।