নারীকে মা, বোন, স্ত্রী এই পরিচয়ের বাইরেও আমাদের ভাবতে শেখা উচিত সেও একজন মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ৮ ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস।প্রতি বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখ বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লিঙ্গবৈষম্য দূর করে নারীর প্রতি সম্মান ও সমানাধিকার জানাতেই দিবসটি উদযাপিত হয়। বিশ্ব নারী দিবস এ বছরের প্রতিপাদ্য হল- “ডিজাইন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন” নারী দিবসের ইতিহাস ছোট করেই একটু শেয়ার করছি: আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতীয় নারীদিবসের আয়োজন করে। এর প্রস্তাব দিয়েছিলেন শ্রমকর্মী থেরেসা মালকিয়েল। শহরের গার্মেন্টস শ্রমিকদের এক প্রতিবাদ স্বরূপ শুরু হয়েছিল এই দিনটির যাত্রা। ১৯১০-এ আমেরিকান সমাজতন্ত্রীদের থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে জার্মান প্রতিনিধিরা নারীদিবস পালন করেন। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে নারীদিবস উদযাপন শুরু করে এবং ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৮ মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তখন থেকেই দিনটি উদযাপন হচ্ছে। বিশ্ব নারী দিবসের যথার্থতা অর্জন করতে আমার একান্ত মতামত হল- নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা বা বৈরি থাকলে চলবে না; একে অন্যের সহযোগী হতে হবে। পুরুষকে নারীর প্রতি সংবেদনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নারীকে পুরুষের চেয়ে ‘দুর্বল ও অধম’ ভাবার একটি চর্চা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে রয়েছে; এর বদল দরকার। পুরুষ কেবল প্রেমেই নারীর কাছে আত্মসমর্পণ করে, এ ছাড়া অন্যকিছুতে নয়; জীবনে নয়, কর্মে নয়। কিন্তু পরিবারে-সমাজে-রাষ্ট্রে নারীর তুলনাতীত ভূমিকা বা অবদানের কথা স্বীকার করা উচিৎ। নারীর কাছে শুধু প্রেমে নয়, শ্রদ্ধায়ও নতজানু হওয়া চাই। এই বোধ যেদিন পুরুষের হবে, সমাজের হবে, সেদিন সমাজ বদলাবে- এর আগে নয়। আমরা নহে দেবী, নহে সামান্য নারী আমরা নারী, আমরা পারি, আমরাই বিজয়ী.. এই মূলমন্ত্র হৃদয়ে ধারন করে এগিয়ে যেতে হবে, হতে হবে ব্যক্তি জীবনে বিজয়ী। এজন্য আমাদের সবাইকে নিজেদের প্রথাগত ও অনুদার মানসিকতা বদলাতে হবে। আর এজন্য সবার আগে দরকার এ বিষয়ে সচেতনতা; হোক না তা নারী দিবসকে কেন্দ্র করেই এই সচেতনতার শুরুটা… একজন নারীকে মা, বোন, স্ত্রী এই পরিচয়ের বাইরেও আমাদের আসলে ভাবতে শেখা উচিত সেও একজন মানুষ। তারও আছে নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের অধিকার। কেননা নারী ঘরে বা বাইরে যা করছে তার পরিবারের জন্য তা কোনো অংশেই একজন পুরুষের চেয়ে কম নয়। বরং আমরাই নারীকে দুর্বল করে রেখেছি। আমরাই আনতে পারি সে সমাজ যেখানে আমরা নারী-পুরুষ সকলে সকলকে মানুষ বলে ভাবতে শিখবো, আনন্দ বেদনায় থাকতে পারবো একে অন্যের পাশে। শুধু নারী দিবস বলেই একটি নির্দিষ্ট দিনে আমরা নারীদের নিয়ে ভাববো, তাকে সম্মান দিবো তা নয়। আসুন আমরা নারীকে তার যথাযথ সম্মান দেই, তাকে দেই তার সদিচ্ছা পূরণের অধিকার, তাকে ভাবতে শিখি স্বতন্ত্র একজন মানুষ হিসেবে ।

তানিয়া ইশতিয়াক খান ফাউন্ডার”- বিজয়ী” নারী উন্নয়ন সংস্থা।