স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যুবসমাজকে প্রস্তুত করা হচ্ছে

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যুবকদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে সরকার জোরারোপ করছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড.মো.আমিনুর রহমান।
আজ রবিবার বিকেলে  অমর একুশে বইমেলা মঞ্চে আয়োজিত যুব উৎসবে   প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, একটি জ্ঞানমুখী, প্রশিক্ষিত ও আদর্শ যুবসমাজ জাতির মেরুদন্ড।  ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামসহ বিভিন্ন সংকট উত্তরণে যুবসমাজের গৌরবোজ্জ্বল অবদান জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে।
“বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বৃহৎ অংশই যুবসমাজ, যার বয়সসীমা ১৮ হতে ৩৫ বছর। আগামী ২০৪৩ সাল পর্যন্ত যুবসমাজের সংখ্যাগত আধিক্যের ধারা অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনসহ বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে এ জনমিতিক সুবিধা (Demographic Dividend) কাজে লাগাতে হবে।  এজন্য সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যুব সমাজকে মানসম্পদে পরিণত করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমাদের যুবসমাজকে পরিপূর্ণ দক্ষ, আধুনিক ও সচেতন রূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর যুবদের দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। এসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবদের অনেকেই আজ সফল আত্মকর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবরা অনেকে বিদেশেও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিয়েছে এবং দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। একটি জ্ঞানমুখী, প্রশিক্ষিত ও আদর্শ যুবসমাজ জাতির মেরুদন্ড। কাজেই যুবদের অবস্থান হবে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে। দেশের মানুষের প্রতি তাদের কর্তব্য ও মমত্ববোধ সবসময় জাগ্রত রাখতে হবে।”
তিনি  মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে তেজোদীপ্ত, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ যুবসমাজকে ২০৪১ সালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কামরুল হাসান বাদল, কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বই মেলা কমিটির আহবায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু।  রুমিলা বড়ুয়া  ও কঙ্কন দাশের উপস্থাপনায় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফন নাহার, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো.নজরুল ইসলাম,মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো.রেজাউল করিম, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন,শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রাণী চাকমা।
প্রধান বক্তা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ফেব্রুয়ারী মাস আমাদের জাতি সত্তার বিকাশে এক অনবদ্য সংযোজন। পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। আঞ্চলিক ভাষার পাশাপাশি প্রমিত ভাষায়  বলা, লেখা এবং পড়ার আহ্বান জানাই আমি। যুব উৎসব হল নবীন প্রতিভার অন্বেষণ ও ধ্বংসের বিরুদ্ধে সৃজনের উৎসব। যুবরা হল সমাজের সব চেয়ে প্রানবন্ত, সৃষ্টিশীল ও উদ্যমশীল অংশ। চোখে তাদের স্বপ্ন আর মনে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়নের অদম্য সাহস এবং লক্ষ্য অর্জনে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আগামীর পৃথিবীকে আরো সুন্দর, বাসযোগ্য করে তোলার জন্য তারা সদা প্রস্তুত। এই যুব সমাজকে ঘিরেই এবারের উৎসব। বাংলাদেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রাম ও অগ্রগতির পথে এ দেশের যুব সমাজের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। মহান ভাষা আন্দোলন হতে স্বাধীনতা সংগ্রামসহ এ দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যুবরা যেমন জীবন উৎসর্গ করতে কার্পণ্য করেনি, তেমনি অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামেও তারা নিরলসভাবে ব্যাপৃত।
সভাপতির বক্তব্যে শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এদেশের অদম্য যুবসমাজ জাতির প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এ দেশের যুবদের বুকে অদম্য শক্তির যে বহ্নিশিখা প্রজ্বলিত করে গেছেন, মানুষের জন্য কাজ করার যে প্রেরণা তিনি যুগিয়েছেন, সেই প্রেরণা নিয়ে এদেশের যুবসমাজ মাথা উঁচু করে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে-এ প্রত্যাশা করি। যুবরাই জাতির প্রাণশক্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান নিয়ামক। যুবসমাজের দৃপ্ত পদচারণায় বিশ্ব এগিয়ে চলেছে এবং অনাগত দিনগুলোতেও তা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি যুব সমাজকে তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, অমিত তেজ ও সাহস, কর্মস্পৃহা ও কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে  দেশ ও জাতির উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।