ধুঁকছে রাশিয়া, নাটকীয়ভাবে কমে গেছে গোলা নিক্ষেপ: ইউক্রেন

ইউক্রেনে রাশিয়ার গোলা নিক্ষেপ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে গেছে। কোনো কোনো স্থানে আর্টিলারি ফায়ার ৭৫ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে দেশটি। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা এখন শেষের দিকে। সিএনএনকে তারা জানিয়েছেন, রাশিয়া এখন হিসেব করে করে গোলা ছুঁড়ছে কারণ তাদের আর্টিলারি রাউন্ডের সরবরাহ কমে গেছে। যদিও তারা এমন দাবির পক্ষে স্পষ্ট কিংবা একক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।

সিএনএন এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় অবস্থানে রাশিয়ার গোলা বর্ষণ কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে দেশটি ক্রমশ সামরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। যুদ্ধের প্রায় ১১ মাস হয়ে গেছে। এই সময়ে রাশিয়া ইউক্রেনের বিশাল এলাকা দখলে নিলেও পশ্চিমা অস্ত্রে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেনও। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্ভর মাসের মধ্যে রাশিয়ার হাত থেকে বেশ কিছু এলাকা পুনরায় দখলে নিয়েছে দেশটি।

মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা সিএনএনকে জানিয়েছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের ওই সফলতার পেছনে রয়েছে পশ্চিমা মিত্রদের থেকে পাওয়া ব্যাপক সরবরাহ। গত সপ্তাহেও যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি ঘোষণা করেছে যে, তারা ইউক্রেনকে আরমর্ড যুদ্ধযান দিতে যাচ্ছে। এছাড়া ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দেয়ারও কথা রয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রথম থেকেই বলছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ নয় বরঞ্চ সীমিত আকারে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিচালনা করছে রাশিয়া।

মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করছেন যে, পুতিন এখন দেশের মধ্যে এই সামরিক অভিযানের পক্ষে সমর্থন বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন। এ জন্যেই অর্থডক্স ক্রিসমাসের দিন তিনি ৩৬ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন। ইউক্রেনের তরফ থেকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হলেও, রাশিয়া জানিয়েছে তারা এই সময় নতুন করে হামলা থেকে বিরত থাকবে। এর মাধ্যমে মূলত দেশের খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর সমর্থন দৃঢ় করতে চেয়েছেন পুতিন।
গত বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে রাশিয়া বেশ কয়েকটি স্থানে পিছু হটেছে। এ বছরের জানুয়ারিতে সোলেদার দখলের আগ পর্যন্ত গত পাঁচ মাসে রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জন নেই। এ সপ্তাহে সোলেদার দখল করে ইউক্রেনের আরও অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে রাশিয়া। তবে এই কৃতিত্বের আসল দাবিদার ভাড়াটে কোম্পানি ওয়াগনার গ্রুপ। এর প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। যদিও ইয়েভজেনি এর আগে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেছেন। ওয়াগনারের সেনাদের আরও অস্ত্র এবং স্বাধীনতা দেয়ার দাবিও জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের এক সিনিয়র কর্মকর্তা সিএনএনের কাছে দাবি করেন, ইউক্রেনে হাজারো সেনা হারিয়েছে ওয়াগনার।

রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক পরিমাণে মিসাইল হামলা চালিয়েছে। এর বড় অংশই হচ্ছে প্রিসিশন-গাইডেড মিসাইল। ইউক্রেনে হাজার হাজার ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুঁড়েছে মস্কো। তবে আগে যেমন ঘন ঘন হামলা চলতো, সাম্প্রতিক সময়ে তা কমে এসেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, রাশিয়ার মিসাইলের মজুদ হয়ত কমে গেছে।

এছাড়া গোলা নিক্ষেপের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে রাশিয়া ৪০ বছর আগে বানানো গোলা ছুঁড়ছে। এর কারণ দেশটি এখন যুদ্ধ পরিচালনা করার মতো যথেষ্ট গোলা উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে দেশটি পুরোনো গোলার ভাণ্ডার খালি করছে ইউক্রেনে। পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া ও ইরানের দিকেও হাত বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের।
শহর দখলে ব্যাপক গোলা ব্যবহার করা রাশিয়ার পুরোনো যুদ্ধ কৌশল। বিশাল শহর মারিউপোল ও মেলিটোপোল দখলেও একই কৌশল অনুসরণ করেছিল দেশটি। রাশিয়া ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে পছন্দ করে। মূলত এই কারণেই গোলার ব্যবহার বেশি হয়। আর এতেই গোলার সংকট পড়েছে বলে মনে করছেন ইউক্রেন ও মার্কিন কর্মকর্তারা।

অপরদিকে ইউক্রেন প্রথম থেকেই কম গোলা ব্যবহার করে আসছিল। রাশিয়ার মতো শক্তির সঙ্গে সমান তালে গোলা ছোঁড়া সম্ভব নয় তাদের। যুদ্ধের প্রথম দিকে তাই তারা সোভিয়েত আমলের ১৫২ এমএম গোলার মজুদ শেষ করেছে। তবে এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো লাখ লাখ ১৫৫ এমএম রাউন্ড দিয়েছে ইউক্রেনকে। যদিও এসব সরবরাহের নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফলে ইউক্রেন প্রতিদিন ৪০০০ থেকে ৭০০০ রাউন্ড আর্টিলারি ব্যবহার করছে প্রতিদিন। এই সংখ্যা রাশিয়ার তুলনায় অনেক কম।
রাশিয়া প্রতিদিন কি পরিমাণ গোলা ছুঁড়ছে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের হিসাবে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রাশিয়া প্রতিদিন ২০ হাজার গোলা ব্যবহার করে। তবে ইদানিং তা কমে ৫ হাজারে নেমে এসেছে। অপরদিকে ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া প্রতিদিন ৬০ হাজার রাউন্ড গোলা ছুঁড়ে, তবে তা এখন কমে ২০ হাজার রাউন্ডে নেমে এসেছে। তবে উভয় হিসাব অনুযায়ীই রাশিয়ার গোলা ছোড়ার হার একেবারেই কমে গেছে।