নির্মাণের মুন্সিয়ানা বাঁধন ম্যাজিক ও জয়ের নয়া উত্থান

প্রচারণায় অনেক এগিয়ে থাকলেও মূল কনটেন্ট তেমন একটা টানে না। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে গত কয়েক বছরে। এক্ষেত্রে অর্জনের চাইতে গর্জনটাই বেশি থাকে। দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ আর তেমন হয় না। বিশ্বব্যাপী ওটিটি জনপ্রিয় হওয়ার পর তো দেশের দর্শকদের কাছে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও কিংবা হৈ চৈ এর মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফরমগুলো সহজলভ্য। তাই দেশে ওটিটির কাজে থাকে অনেক চ্যালেঞ্জও। আর সেই চ্যালেঞ্জে বেশ ভালোভাবেই উতরে গেছে দেশের ওয়েব প্ল্যাটফরম চরকিতে সদ্য মুক্তি পাওয়া সাত পর্বের ‘গুটি’ ওয়েব সিরিজ। প্রচারণায় যতটা এগিয়ে ছিল, তার থেকে ঢের এগিয়ে ‘গুটি’ মূল কনটেন্টে। ছবির প্রধান চরিত্রে আজমেরী হক বাঁধনের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। সৃজিত মুখার্জির ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি’ সিরিজের মাধ্যমেও প্রশংসিত হন তিনি।

বিশাল ভরদ্বাজের বলিউড ছবিতেও কাজ করেছেন বাঁধন। তাই স্বভাবতই এসবের পর এ অভিনেত্রীর কাছে প্রত্যাশাটাও বেশি দর্শকদের। সেদিক থেকে দারুণ চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিশ্চয়ই করতে হয়েছে তাকে ‘গুটি’। শঙ্খ দাসগুপ্ত পরিচালিত এ সিরিজে বাঁধন অনবদ্য অভিনয় করেছেন সুলতানা নামের একজন মাদক পাচারকারীর চরিত্রে। হাসপাতালে কাজ করলেও সেখানকার কর্তা ব্যক্তির নির্দেশে কয়েক বছর ধরেই মাদক পাচার করেন তিনি ভয়াবহ তরিকায়। শরীরের গোপন স্থানে মাদক লুকিয়ে সেটি পাচার করেন। কাজটি করতে গিয়ে ব্যাপক শারীরিক কষ্টেও পড়তে হয় তাকে। এ কাজটিকে অত্যন্ত বাস্তবিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক শঙ্খ। মাদক গোপন স্থানে প্রবেশ করানো থেকে শুরু করে সেটি বের করা পর্যন্ত এমন দৃশ্যের অবতারণা বোধহয় আর কোনো সিরিজে হয়নি। শুধু তাই নয়, সুলতানা রূপী বাঁধন যেহেতু এ কাজ থেকে বের হয়ে যেতে চান, তাই তার শারীরিক ও মানসিক কষ্টের ছাপ চোখে-মুখে স্পষ্ট। তার অভিনয়ের ম্যাজিক নিশ্চয়ই দর্শকদের মনে থাকবে দীর্ঘদিন। পরিচালক সুলতানার স্বামী সেলিম চরিত্রে অভিনয় করা শাহরিয়ার নাজিম জয়কে আলাদা রূপে হাজির করেছেন। ‘গুটি’তে জয়ের যেন অভিনেতা হিসেবে নতুন করে উত্থান হয়েছে। স্ত্রী সুলতানা ও মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। তবে সে সুলতানার আয়ের ওপর নির্ভরশীল। আবার পরকীয়ায়ও আসক্ত। মৌসুমী হামিদের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক সুলতানার কাছে ধরা পড়লেও সেটি প্রথমদিকে চেপে যান বাঁধন। বাঁধন যে সিএনজি করে মাদক পাচার করেন তার চালক অভিনেতা নাসিরউদ্দিন। এখানে তার সাবলীল অভিনয় যে কারও নজর কাড়বে। অন্য চরিত্রগুলোর অভিনয়ও ছিল পরিমিত ও সুন্দর। ‘গুটি’র সাতটি পর্বের প্রতিটি পর্ব দেখার সময়ই মনে হয় পরের পর্বে কী হবে। জানার আগ্রহ বাড়তে থাকে। এখানেই নির্মাতার মুন্সিয়ানা। শেষ পর্বে গিয়ে দেখা যায় সুলতানা চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা পালিয়ে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চাইলেও ব্যর্থ হন। সেখানে প্রতারণারও শিকার হন। অবশেষে পাচারকারী বাহিনীর কারণে মেয়েসহ সমুদ্রপথে নিরুদ্দেশে যাত্রা করতে হয় সুলতানাকে। যারা ‘গুটি’র সাতটি পর্ব দেখবেন তারা নিশ্চয়ই পরের সিজনের অপেক্ষায় থাকবেন। কারণ সুলতানার জীবনের বাকি গল্প বলা বাকি রয়ে গেল। থেকে গেল জানার তৃষ্ণা। যেটা হয়তো সিজন টুতে পরিচালক শঙ্খ দাসগুপ্ত তার কারিশমায় দেখাবেন। এমন সিরিজ প্রযোজনার জন্য চরকি ও প্রযোজক রেদোয়ান রনি অবশ্যই সাধুবাদ পেতে পারেন।