টিকে থাকতে ‘বন্ধুপ্রতীম’ দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে পাকিস্তান

পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুতই কমে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (এসবিপি) প্রকাশিত তথ্য মতে, তাদের বৈদেশিক রিজার্ভ ৬.৭ বিলিয়ন ডলার যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই অর্থ দিয়ে মাত্র চার থেকে পাঁচ সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। এমন পরিস্থিতিতে ‘টিকে থাকতে’ চীন ও সৌদি আরবের মতো বন্ধু দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে আছেন পাকিস্তান।

দীর্ঘমেয়াদি করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের মতোই অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে পাকিস্তান। নজিরবিহীন বন্যা ও ইউক্রেন সংঘাতে সেই সংকট আরও ঘনিভূত হয়ে ওঠে। ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির ব্যাপক অবমূল্যায়ন হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। ভোজ্যতেল, ডাল-শস্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। সেই সঙ্গে কমতে থাকে আমদানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক রিজার্ভ।

চলতি বছরের আগস্টেই দেশটির রিজার্ভ ৮ বিলিয়ন ডলারেরও নিচে নেমে যায়। যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির আর্থিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের মাধ্যমে সেই বিপর্যয় ঠেকানোর চেষ্টা করছে দেশটি। সম্প্রতি পাকিস্তানকে প্রতিশ্রুত ঋণের ১.১০ কোটি ডলার অর্থ ছাড় করেছে আইএমএফ।

তবে আইএমএফের এই ঋণের অর্থে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। গত তিন মাসে রিজার্ভ আরও কমেছে। এমন অবস্থায় ‘মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে হাজির হয়েছে বৈদেশিক ঋণের বোঝা। যেমনটা বলছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (এসবিপি) গভর্নর জামিল আহমেদ। গত বৃহস্পতিবারই (৮ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সামনে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি দেয়ার সময় আসছে। কিন্তু শিগগিরই রিজার্ভ বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

জামিল আহমেদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ‘বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো’ই ভরসা। এআরওয়াই নিউজের বরাত দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানায়, সৌদি আরবের কাছে ৪.২ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে চীনের কাছে ৮.৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছে।

সব মিলিয়ে আপাতত ১৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা কূটনৈতিক দৌড়ঝাপ শুরু করেছে পাকিস্তান। চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পাকিস্তানের যে পরিমাণ অর্থের দরকার হবে ১৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা তার মাত্র ৩৮ শতাংশ। এই অর্থ দেশটিকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে আপাতত রক্ষা করতে পারবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

এর আগেও বেশ কয়েকবার মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান। তবে তা কখনই এবারের মতো এতটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে যায়নি। আগে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে পারমাণবিক শক্তিধর দেশটির কৌশলগত গুরুত্ব বিবেচনায় সহায়তা-সমর্থন দিয়ে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে বৈশ্বিক অর্থনীতির পরাশক্তি দেশগুলো। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। গত কয়েক বছরে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

এর ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের ‘অল ওয়েদার ফ্রেন্ড’ হিসেবে বিবেচিত চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়লেও মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ব্লক ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে ইসলামাবাদের। আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, বর্তমানে শাহবাজ শরিফ সরকার এ দূরত্ব ঘোচানোর প্রয়াস চালালেও এখনও পুরনো বন্ধুদের আস্থায় ফেরেনি পাকিস্তান।