ছোট হয়ে আসছে রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল

দেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদনকারী গুমাই বিল দখল করে গড়ে উঠছে নানান স্থাপনা। ফলে ছোট হয়ে আসছে ‘শস্যভাণ্ডার’ খ্যাত এই এলাকার আয়তন।

দেশের অন্যতম বৃহৎ এই বিলে ধানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ভরাটপূর্বক গড়ে তোলা হচ্ছে বসত-বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অনেক জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ফসল বিধ্বংসী ইটভাটা। এতে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে বেপরোয়া ভূমিদস্যুরা।

গুমাই বিল একসময় ঝিল ছিল। ঝিলে পাওয়া যেত প্রচুর মাছ। ১৯৪৫ সালে স্থানীয় আবদুল বারী তালুকদার এই বিল সংস্কার করে আধুনিক চাষাবাদ শুরু করেন। গুমাই ঝিলকে গুমাই বিলে পরিণত করার শুরু তার হাত দিয়েই।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গুমাই বিলের অবস্থান। বিলের জমিতে প্রতি বছর ইরি ও আমনের বাম্পার ফলন হয়। পাকিস্তান আমল থেকে এই বিলে ধান চাষ শুরু হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলো এখানে আধুনিক সেচের ব্যবস্থা করে।

স্থানীয় বাইনালার ছড়া, সোনাইছড়ি, মুন্দরী, কুরমাই, ইছামতি, বারঘোনিয়া, ঘাগড়া হ্রদ খাল ও গুট্টাকার খালের সংযোগ রয়েছে গুমাই বিলের সঙ্গে। এর মাধ্যমে পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে কৃষি বিভাগ। শুরুতে এই বিলের আয়তন ছিল ৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি। বর্তমানে তা কমতে কমতে ৩ হাজার হেক্টরে নেমে এসেছে। আবাদি এই বিলে অপরিকল্পিত আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের কারণে রাঙ্গুনিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।

কাপ্তাই সড়কপথে মরিয়মনগর চৌমুহনী পার হলেই দেখা মিলে ঐতিহ্যবাহী গুমাই বিলের। মরিয়মনগর থেকে শুরু করে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে কৃষিজমি ভরাট করে গড়ে উঠছে অসংখ্য স্থাপনা। আবাসিক আর অপরিকল্পিত বাণিজ্যিক ভবনের পাশাপাশি এই বিলে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এই ইটভাটার কারণে আশপাশের কৃষিজমিতে ধানের ফলন কমছে।

চন্দ্রঘোনা ছুফি পাড়া গ্রামের কৃষক নুরুল আলম বলেন, ‘গুমাই বিলে শত শত কৃষকের জমি রয়েছে। তবে এসব কৃষিজমি দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিত্তবানরা কৃষিজমি নিয়ে বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন’।

কদমতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইদ্রিচ আজগর বলেন, ‘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক টুকরো জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী গুমাই বিলে শ্রেণি পরিবর্তন করে চলছে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক। ইদানিং এটি আরও বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া হলে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো’।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, ‘গুমাই বিলে আবাদি জমির পরিমাণ কমছে প্রতিনিয়িত। স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে বাধাদানের কোনও এখতিয়ার আমাদের না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে গুমাই বিলে ইটভাটার ব্যাপারে তদন্তের দায়িত্ব পেলে আমি এর ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছিলাম’।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, ‘কৃষিজমি বেচাকেনা করা যাবে। কিন্তু শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে অনুমতি নেওয়ার বিধান আছে। গুমাই বিল রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ম্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ম্যাপ তৈরি হয়ে গেলে এটি রক্ষার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে’।