দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন রাজার রাজ্যাভিষেক

রাজা মিসুজুলু কা জলিথিনি’র (৪৯) রাজ্যাভিষেক। সেজন্য বর্ণিল করে সাজানো হয়েছে মোসেস মাবহিদা স্টেডিয়াম। রাজার অভিষেক উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে জুলু সম্প্রদায়ের ব্যাপক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর মধ্যে বয়স্ক এবং যুব সমাজ পরবেন বিশেষ প্রচলিত রেগালিয়া নামের রাজকীয় পোষাক। সাধারণত এসব অনুষ্ঠানে যুবতীরা, টিনেজ মেয়েরা শরীরের উপরের অংশ অনাবৃত রেখে বিশেষ এক নাচ পরিবেশন করে থাকেন। এই আয়োজন করা হয়েছে উপকূলীয় শহর ডারবানে। সেখানে গান, নানা রকম স্লোগান এবং নাচে মাতিয়ে রাখা হয়েছে। এখানেই রাজা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে শনিবার স্বীকৃতি দেয়ার কথা মিসুজুলু কা জলিথিনি’কে। ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতন্ত্র ফিরে আসার পর এটাই হতে যাচ্ছে সেখানে প্রথম জুলু রাজ্যাভিষেক। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

দক্ষিণ আফ্রিকায় এর আগেই সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

তার কয়েকদিন পরে হামলা ঝুঁকির মধ্যেই এই অনুষ্ঠান হচ্ছে। পুলিশ বিষয়ক মন্ত্রী ভেকি চেলে বলেছেন, মোসেস মাবহিদা স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে কোনো প্রভাব ফেলবে না এই হুমকি। উল্লেখ্য, ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন বিদেশি বিশিষ্টজনরা, হাজার হাজার মানুষ। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক কিছুই ঘটতে যাচ্ছে প্রথম।
প্রেসিডেন্ট সাইরিল রামাফোসা প্রথমবার রাজা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবেন মিসুজুলু কা জলিথিনি’কে। এটাই হবে জুলুদের রাজ্যাভিষেকে প্রথম একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের জড়িত থাকার ঘটনা। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে প্রথমবারের মতো পারিবারিক তীব্র বিরোধের ইতি ঘটবে।

এর আগে সর্বশেষ রাজ্যাভিষেক ঘটেছিল ১৯৭১ সালের এক বৃষ্টির দিনে। তা হয়েছিল বর্ণবাদী সরকারের অধীনে। ওই সময় রাজা গুডউইল জলিথিনি কা ভেকুজুলু’কে ক্রাউন পরিয়ে রাজা বানানো হয়েছিল। তখন থেকে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রীতিনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে সরকার। কিন্তু শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু কর্তৃপক্ষ চাইছে তাদের রাজা পশ্চিমা ধারার পোশাক পরুন। কারণ, তাদের দেশ এখন গণতান্ত্রিক। তাই রাজাকে এই স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। এর আগের রাজা জুলু অনুষ্ঠানে শুধু জুলু সংস্কৃতির অংশ হিসেবে চিতাবাঘের চামড়ার পোশাক পরতেন।

কিন্তু শনিবারের অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করার কথা জুলু সংস্কৃতি। এর মধ্যে আছে যুবক-যুবতী এবং প্রবীণদের প্রচলিত রাজ্যাভিষেকের পোশাক। প্রেসিডেন্ট রামাফোসা স্বীকৃতি দিয়ে নতুন রাজাকে একটি সনদ হাতে দেয়ার পর মিসুজুলু কা জলিথিনি হবেন দক্ষিণ আফ্রিকার নবম রাজা। ইউনিভার্সিটি অব কাওয়াজুলু-নাতাল এবং জুলু সংস্কৃতির বিশেষজ্ঞ আফ্রিকান ভাষাবিদ প্রফেসর সিহাউকেলে নগুবানে। তিনি বলেছেন, এটা এক আনন্দের অনুষ্ঠান। এটা হলো নতুন একটি যুগের সূচনা। বর্ণবাদের যুগে সরকার রাজাকে সনদ দিয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের রাজা তার ইচ্ছামতো প্রচলিত পোশাক পরবেন এটাই আশা করি। কারণ, আমরা গণতন্ত্রের মধ্যে বসবাস করি। রাজার জন্য বৃটেন-উৎসাহিত পোশাক পরার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

এ ছাড়া রাজ্যাভিষেকের এই অনুষ্ঠান প্রথমবার সরাসরি জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করার কথা। এ দেশটির এক পঞ্চমাংশ মানুষ জুলু। সেখানে বছরে রাজাকে আয়কর দাতাদের পরিশোধ করতে হবে কমপক্ষে ৩৬ লাখ ডলার। জুলু রাজপরিবার বাজেটের বড় একটি অংশ পেয়ে থাকে। কাওয়াজুলু নাতাল প্রদেশের সরকার বর্ণনা করেছে যে, যে অর্থ রাজপরিবারকে দেয়া হবে তা শুধু ওই পরিবারের জন্য ব্যয় হবে না। এই অর্থ দিয়ে স্টাফদের বেতন দেয়া হবে। রাজপ্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। অনুষ্ঠানাদি আয়োজন করা হবে।

ওদিকে বিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলোও নতুন রাজাকে স্বাগত জানিয়েছে। এর মধ্যে আছে বিতর্কিত রাজনীতিক জুলিয়াস মালেমার নেতৃত্বাধীন ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটারস। জুলু ইঙ্কাথা ফ্রিডম পার্টি বলেছে, তারা রাজ্যাভিষেককে সামনে রেখে শাসক আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সঙ্গে মতবিরোধ কমিয়ে এনেছে। তবে এ ঘটনায় দৃশ্যত অসন্তুষ্ট একটিমাত্র দল। তারা হলো সাউথ আফ্রিকান কমিউনিস্ট পার্টি।