ভারতে ফের আলোচনায় ইভিএম

ভারতের সংবাদ মাধ্যমের খবর, ইভিএমে কারচুপির আশঙ্কা তুলে মঙ্গলবার দিল্লিতে তারা দেখা করেছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে, দিয়েছে স্মারকলিপি।

তবে নির্বাচন কমিশন তাদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিরোধী নেতাদের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা।

এপ্রিল মাসে শুরু হয়ে গত রোববার শেষ হয় ভারতে পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ। ৮৩ কোটির বেশি ভোটারের জন্য ৫৪২টি আসনের নয় লাখ কেন্দ্রে সাত পর্বে চলে ভোটগ্রহণ।

ভারতে সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পর সঙ্গে সঙ্গেই গণনা হয় না। ব্যালট বাক্স কিংবা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলো (ইভিএম) কঠোর নিরাপত্তায় সংরক্ষিত থাকে বিভিন্ন রাজ্যের ‘স্ট্রংরুম’গুলোতে। সব পর্বের ভোট শেষে হয় গণনা।

এবার আগামী বৃহস্পতিবার ইভিএম ও ব্যালটের ভোট গণনা শুরু করতে যাচ্ছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।

তার আগে মঙ্গলবার ‘স্ট্রংরুমে’ ইভিএম নিয়ে ট্রাকের ঢোকার দৃশ্য সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে বিরোধী শিবিরও নামে অভিযোগের আঙুল তুলে।

ভারতের সংবাদপত্রগুলো জানায়, ইভিএমের খবর দেখেই নয়াদিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে তেলেগুদেশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু নাইডুর উদ্যোগে জরুরি বৈঠকে বসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

সেই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ, অশোক গেহলট ও অভিষেক মনু সাঙ্ঘভি, ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন, আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বহুজন সমাজ পার্টির নেতা দানিস আলিসহ অনেকে।

এরপর বিরোধী ২২টি রাজনৈতিক দলের নেতারা একযোগে যান নির্বাচন কমিশনে। স্মারকলিপিতে তারা ইভিএমে যে কোনো ধরনের কারচুপি এড়াতে ইসির সক্রিয়তা প্রত্যাশা করেন।

কংগ্রেস নেতা মনু সাঙ্ঘভী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট নমুনা হিসেবে পাঁচটির কথা বলেছিল, কিন্তু যদি কারচুপি একটিতে হতে পারে, তাহলে সব আসনেই হতে পারে।

কংগ্রেস নেতারা বলছেন, তাদের আশঙ্কা ইভিএমে কংগ্রেসের পাঞ্জাসহ যে প্রতীকেই ভোট দেওয়া হোক, তা পড়ছে বিজেপির পদ্মফুলে।

গুলাম নবী আজাদ বলেন, তারা ইসিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন, বুধবার ইসি তাদের সঙ্গে ফের কথা বলবে।

বুথ ফেরত জরিপে নরেন্দ্র মোদীর ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আভাসের পর বিরোধী দলগুলোর এই পদক্ষেপ নিয়ে পরিহাস করেছেন বিজেপি নেতারা।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিরোধী নেতাদের এই চেষ্টা লজ্জাজনক।

আরেক মন্ত্রী রবি শঙ্কর বলেছেন, “যখন তাদের নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রবাবু নাইডু, অমরিন্দ্রর সিং, অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা ভোটে জেতেন, তখন ইভিএম খুব ভালো; আর মোদী জিততে চলেছেন বলে ইভিএম খারাপ হয়ে গেল!”

এদিকে বিরোধীদের অভিযোগের পর ইসির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।

হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, বিরোধী নেতারা ইভিএমে কারচুপি এড়াতে দুটি প্রস্তাব দেন। প্রথমত, যে নির্ধারতি পাঁচটি বুথে ভিভিপ্যাট আগে গুণতে হবে, তারপর তার সঙ্গে ইভিএমের ভোট মিলিয়ে দেখতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভিভিপ্যাট ও ইভিএমে ভোটে গরমিল হলে সব বুথে ভিভিপ্যাট গণনা করতে হবে।

ভারতে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ আগেও উঠেছিল, তা ইভিএম যন্ত্রের পাশে আরেকটি যন্ত্র রেখেছে ইসি, যার নাম ‘ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইলিং’, সংক্ষেপে ভিভিপ্যাট।

ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর ওই ভোটার যাবে ভোট দিয়েছেন, সেই প্রার্থীর নাম, ক্রমিক সংখ্যা ও প্রতীক ভিভিপ্যাটের ব্যালট স্লিপে ছাপানো অক্ষরে দেখা যাবে। তার পরে সেই তথ্য-সম্বলিত স্লিপ জমা হবে ড্রপবক্সে।

ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত এপ্রিলে এক নির্দেশে প্রতিটি আসনে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে পাঁচটি কেন্দ্রে ভিভিপ্যাট স্লিপ ও ইভিএমের ভোট মিলিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিল।