জেরুজালেম ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়ার ইউটার্ন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চার বছর আগে তাল মিলিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তারাও পশ্চিম জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। শেষ পর্যন্ত তাদের বোধোদয় হয়েছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছে চার বছর আগের ওই সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে আসবে তারা। অর্থাৎ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেবে না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য কিছু দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শান্তি প্রক্রিয়াকে অবনমন করে জেরুজালেমকে ২০১৮ সালে ইসরাইলের রাজধানী করার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তাদের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং মনে করছে ভোটের মাঠ নিজেদের পক্ষে আনতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সরকার। তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যাতে দেশে অবস্থানরত ইহুদি ভোটারদের ভোট পান। কিন্তু পেনি ওং বলেন, ইসরাইলের এক অটল বন্ধু হিসেবে থাকবে অস্ট্রেলিয়া। তবে তাদের দূতাবাস থাকবে তেল আবিবে।

জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়ার আগে এখানেই ছিল অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস।
ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সবচেয়ে বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোর অন্যতম জেরুজালেমের মর্যাদা। জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের রাজধানী হিসেবে দেখতে চায়। ইসরাইলও একই দাবি করে। এ নিয়েই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। অস্ট্রেলিয়ায় মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে বর্তমান সরকার তড়িঘড়ি করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ। তিনি বলেছেন, মিডিয়ার একটি ভুল রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আমরা আশা করবো, অন্য বিষয়গুলো অধিক গুরুত্ব এবং পেশাদারি মনোভাবে ব্যবস্থাপনা করবে অস্ট্রেলিয়া। তিনি আরও দাবি করেন, জেরুজালেম হলো ইসরাইলের চিরন্তন এবং একীভূত রাজধানী। কোনো কিছুই তা পরিবর্তন করতে পারবে না।

প্রাচীন শহর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ২০১৭ সালে স্বীকৃতি দেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি এ কাজ করেন। এতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক নিন্দা জানানো হয়। তার সিদ্ধান্তের পর ২০১৮ সালের মে মাসে তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে নেয়া হয় জেরুজালেমে। এর কয়েক মাস পরে অস্ট্রেলিয়ার তখনকার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ঘোষণা করেন যে, তার সরকারও এই ধারা অনুসরণ করবে। অর্থাৎ তারাও পশ্চিম জেরুজালেমকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বীকৃতি দেবে। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরাবেন না। এ বছর মে মাসে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে ক্ষমতা হারায় মরিসনের সরকার।

মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইহুদি ভোটারদের মন জয় করতে ওটা ছিল সাবেক সরকারের একটি নিষ্ঠুর খেলা। তিনি বলেন, মরিসনের সিদ্ধান্ত রাজনীতিতে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থানকে পরিবর্তন করেছে। এ জন্য আমি অনুতপ্ত। অস্ট্রেলিয়ায় যেসব মানুষ এ বিষয়ে খুব বেশি যত্নশীল তারা ওই সরকারের এমন সিদ্ধান্তে আহত হয়েছেন। তাই তিনি তার দেশের আগেকার এবং দীর্ঘদিনের অবস্থান নিশ্চিত করার ঘোষণা করেন। বলেন, জেরুজালেমের মর্যাদার বিষয়টি সমাধান করা উচিত ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার মাধ্যমে।
ওদিকে নিজেদের দূতাবাস বর্তমানে জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার কথা বিবেচনা করছে বৃটেন।