শুধু র‌্যাবকে নয়, শেখ হাসিনার সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকের সমাবেশ প্রমাণ করেছে, ভয় দেখিয়ে চট্টগ্রামবাসীকে দমিয়ে রাখা যায়নি। চট্টগ্রাম থেকে সূচনা হয়েছে। এবার সারা বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠবে। No description available.বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে গদি থেকে নামিয়ে আনবে। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য- শেখ হাসিনাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। শেখ হাসিনাকে জনগণ আর একদিনও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই আন্দোলন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাব। তিনি বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে ৫ জন নেতাকে হত্যা ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই সরকার পুলিশ, র‌্যাব, প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে। দেশে আজ কারও নিরাপত্তা নেই। দিনে-দুপুরে মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি হচ্ছে। গুম, খুন, বিনা বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ পরিস্কার করে বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে- এদেশে কোনো মানবাধিকার নেই। র‌্যাব একটা প্রতিষ্ঠান, সেটাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, শুধু র‌্যাবকে নয়, শেখ হাসিনার সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। এই সরকার অনির্বাচিত সরকার। এই সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই। আগের রাতে ভোট নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করেছে। এই সরকার বাংলাদেশকে শ্মশানে পরিণত করেছে। ফখরুল বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর হয়ে গেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম গণতন্ত্রের জন্য।No description available. সেই গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ নির্বাসনে পাঠিয়েছে। আমরা আবার যুদ্ধ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব। এ লড়াই বড় কঠিন লড়াই, বড় শক্ত লড়াই। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। আমরা যদি প্রতিরোধ করতে না পারি, তাহলে এদেশের মানুষ তাদের অধিকার, গণতন্ত্র ফিরে পাবে না। এটা বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবকিছু লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে। শেখ হাসিনা ১০ টাকায় চাল দেবে বলেছিল, এখন চালের দাম ৭০ টাকা। চাল, ডাল, তেল, নুন, মাছ, মাংস সবকিছুর দাম তিন থেকে পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের দাম কয়েকবার বাড়িয়েছে। এখন শুনতে পাচ্ছি, বিদ্যুতের দাম নাকি আবার বাড়াবে। বারবার দাম বাড়াতে হচ্ছে কেন ? কারণ তারা টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। এখন আবার শেখ হাসিনা বলছেন- দুর্ভিক্ষ আসছে, আপনারা কম খান। আমরা বলি- দেশ চালাতে না পারলে ছেড়ে দিয়ে এখনই চলে যান। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোটের আয়োজন করবে। জনগণ ভোট দিয়ে একটি সংসদ নির্বাচিত করবে, যেটা হবে জনগণের সংসদ। জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করুন। ডিসি-এসপিরা নির্বাচন কমিশনারকে মানে না।No description available. এরা কিভাবে নির্বাচন করবে ? নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া আজ বন্দী। উনাকে রাজনৈতিক সাজা দেয়া হয়েছে। তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা করে তাকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। তারেক রহমানকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনব। আমার দেশ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনব, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান দেখেছেন। আমরা ক্ষমতায় গেলে চাল-ডালসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাব। বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনব। বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করব। যত সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো সমাধান করব। ফখরুল বলেন, আমাদের একজন নেতাকর্মীও মামলা ছাড়া নেই। সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য আমাদের পাঁচজন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এরা সবাই সাধারণ মানুষ। কেউ অর্থবিত্তের মালিক নয়। এরা পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে বলেছে- গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য বুক পেতে দিয়েছি, গুলি কর। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। এই দেশকে আমরা মুক্ত করবোই। বিশেষ অতিতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসতে পথে পথে বাধা দিয়েছে। হামলা করেছে, গাড়ি ভাংচুর করেছে। কিন্তু সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আজকের সমাবেশকে জনতা মহাসমাবেশে পরিণত করেছে। সরকারের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। এই সরকার আমাদের ৩৭ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। গুম, খুন, বিনা বিচারে হত্যা করেছে। তারপরও একজন কর্মীও বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়নি। সরকার বিএনপিকে দমাতে পারেনি। তিনি বলেন, আমরা দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ করছি। এসব দাবি শুধু বিএনপির দাবি নয়, ১৮ কোটি মানুষের দাবি। পুলিশ ভাইদের বলব- আপনারা আমাদের বাধা দেন কেন ? আপনারা তো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আপনারা ভোটচোরদের স্বার্থরক্ষা করেন কেন ? সরকারকে বলতে চায়- বারবার ভোটচুরি করে ক্ষমতায় আসা যাবে না। এই সমাবেশ থেকে শেখ হাসিনার পতনের সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এদেশে যতবার গণতন্ত্র সংকটের মুখে পড়েছে জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীরাই সেই সংকট থেকে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়ে গিয়েছিলেন। নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব।