বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্য তেল

    বিশ্ববাজারে দীর্ঘদিন ধরে নিম্নমুখী সয়াবিন ও পাম তেলের দাম। দাম কমার কিছুটা প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। গত সোমবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করে। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৭ টাকা কমিয়ে ১৫৮ টাকা করা হয়, যা গত মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৪ দিন পরও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। এখনো আগের দরে অর্থাৎ ১৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। অন্যদিকে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকায়। এতে ভোক্তাদের পকেট থেকে শত কোটি টাকা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র লুট করছে বলে অভিযোগ ভোক্তাসাধারণের। অথচ দাম বাড়লে ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। আর কমলে ঘোষণার এক সপ্তাহেও কমানো হয় না।

    বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় ২ লাখ টন, বাকি ১৮ লাখ টনই আমদানি করতে হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী ফসলের উৎপাদন হয় মাত্র ৩ লাখ টন, যা চাহিদার শতকরা ১২ ভাগ। বাকি ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশে প্রতি মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় দেড় লাখ টন। অন্যদিকে সাধারণ সময়ে দৈনিক ৫ হাজার টন তেলের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর রমজান মাসে চাহিদা বেড়ে ৮ হাজার টন হয়। সেই হিসেবে বাজার থেকে কয়েক দিনে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এদিকে বাজারে নতুন দামের তেল সরবরাহ না হওয়ার বিষয়ে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আমরা এখনো ডিলারদের থেকে নতুন দামের সয়াবিন তেল পাইনি। মঙ্গলবার তেলের দাম কমানো হয়েছে। কিন্তু অনেক কোম্পানি এখনো নতুন দামের তেল সরবরাহ করেনি।

    বিএনপি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী নাসির হোসেন বলেন, এখনো আগের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ আমাদের কাছে আগের তেল এখনো রয়েছে। এ ছাড়া এখনো নতুন দামের তেল ডিলারদের থেকে আমরা পাইনি। নতুন দামের তেল পেলে অবশ্যই কম দামে বিক্রি করবো। আগারগাঁওয়ের তালতলায় বাজার করতে আসা আতাউর রহমান বলেন, আমাদের দেশে তেলের দাম বাড়লে রাতারাতি বাজারে দাম বেড়ে যায়। আর দাম কমলে বাজারে নতুন দামের তেল আসতে সময় লাগে। এটা চিরাচরিত ঘটনা। এটা নিয়ে এখন আর কথা বলতে ইচ্ছে হয় না। তাদের যা ইচ্ছে করুক। আমরা বলেও তো কোনো লাভ হবে না। তিনি বলেন, এখানে সরকারের সঠিক ভূমিকা দরকার। ভোক্তা অধিদপ্তর যদি তাদের দায়িত্বটা ঠিকঠাক পালন করতো তাহলে এই সমস্যাটা হতো না। আরেক ক্রেতা রশিদুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক আগে থেকেই কমছে।

    সরকারও অবশেষে তেলের দাম কিছুটা কমিয়েছে। কিন্তু বাজারের চিত্র এখনো পরিবর্তন হয়নি। বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে ক্রেতাদের পকেট কাটছে। কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, কোনো জিনিসের দাম কমলেই বাজারে এর প্রভাব পড়তে অনেক সময় লাগতে দেখা যায়। অসাধু সিন্ডিকেট এটা প্রতিনিয়ত করেই চলেছে। এ জন্য সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোকে বাজার মনিটরিং বাড়াতে হবে। আর অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, নতুন দরের ভোজ্যতেল বাজারে ছাড়ছে কিনা আমরা মনিটরিং করছি। আসলে দাম কমলে দেখা যায় তারা ছাড়তে দেরি করে, আবার দাম সকালে বাড়লে বিকালের মধ্যে বাজারে ছেড়ে দেয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবকিছুই আমাদের দেখতে হয়। ডিম, তেল, চাল এমনকি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের হোটেল ইত্যাদি। সবকিছু মনিটরিং করার চেষ্টা করছি। আমরা কতটুকু করতে পারবো…। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।