’৭১ বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকে না

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, চট্টগ্রামের প্রস্তুতি সভায় সাংবাদিক শওকত বাঙালি

দেলোয়ার আহ্বায়ক, আলা উদ্দিন ও মনসুর যুগ্ম আহ্বায়ক, অলিদ সদস্য সচিব

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, চট্টগ্রাম জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনকল্পে আয়োজিত সভায় বক্তারা বলেছেন, একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের প্রশ্নটি জড়িত। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ গোটা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলো একটি স্বাধীন সার্বভৌম, শোষণমুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তাগিদে। ’৭১-এ জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী প্রভৃতি মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক দলের মুষ্টিমেয় নেতা, কর্মী ও সমর্থক ছাড়া সমগ্র বাঙালি জাতি ছিলো ঐক্যবদ্ধ। পরবর্তীকালে এই ঐক্যের অভাবই জামায়াত ও তাদের সহযোগি ঘাতক দালাল, যুদ্ধাপরাধীদের পুনরুত্থানের সাহায্য করেছে। ’৭১ কখনো বাঙালি জাতির কাছে পুরনো বা বাতিল বিষয় হতে পারে না। ’৭১ বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকে না।
গতকাল ২০ সেপ্টেম্বর, বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস. রহমান মিলনায়তনে সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা উপর্যুক্ত কথাগুলো বলেন।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব লেখক-সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠক শওকত বাঙালি।
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে নির্মূল কমিটির ৩০ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে নিজেকে অভিহিত করে যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা শওকত বাঙালি বলেন, বিভিন্ন সময়ে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে এই সংগঠন এগিয়ে চলেছে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের দিকে। যেসব আদর্শ ও লক্ষ্য সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো তার প্রতিফলন ঘটেছিলো বাহাত্তরের সংবিধানে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিলো প্রজাতন্ত্রের নীতি হবে গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। এই সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিলো। অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। আর সম্ভব হয়নি বলেই একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলমান থাকবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য শহীদ জননী জাহানারা ইমাম নির্মূল কমিটি গঠনের মাধ্যমে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তা পুর্ণমাত্রায় সফল করতে হলে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। এ আন্দোলন সূচনার পূর্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যের কারণে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সমাজে ও রাজনীতিতে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার সুযোগ পেয়েছে। এই আন্দোলন যখন তুঙ্গে ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক দলগুলো যখন শহীদ জননীর আহ্বানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়েছে তখন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি কিভাবে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিসমূহ তাদের গুটিয়ে নিতে শুরু করেছিলো।
সংগঠনের জেলা কার্যকারী সাধারণ সম্পাদক মো. অলিদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন জেলা নির্মূল কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চবি নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. আলা উদ্দিন, কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রনেতা হাসান মনসুর, অধ্যাপক মিনু মিত্র, হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. জমসেদ উদ্দিন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য মিথুন মল্লিক, রুবা আহসান, রুবেল আহমেদ বাবু, সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মইনুদ্দিন, দীপঙ্কর চৌধুরী কাজল, মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, মো. হেলাল উদ্দিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক হাবিব উল্লাহ চৌধুরী ভাস্কর, আবু সাদাত মো. সায়েম, আবদুল মান্নান শিমুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন চৌধুরী, আসাদুজ্জামান জেবিন, অ্যাডভোকেট মো. সাহাব উদ্দিন, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সূচিত্রা গুহ টুম্পা, সহ-প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক রুবেল চৌধুরী, সহ-প্রকাশনা সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদিন, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহাদাত নবী খোকা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাজীব চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য এসকান্দার আলী, নাছিমা আকতার, মুক্তা হাওলাদার, আবু সুফিয়ান, আকিব জাবেদ, কানিজ ফাতেমা, বায়েজীদ থানা শাখার মো. সোহেল, কাজী মুহাম্মদ রোকনুজ্জামান, কোতোয়ালী শাখার অথৈ মজুমদার অনিন্দ্য, জ্যোতির্ময় ধর, পংকজ বড়–য়া দেবু, খুলশী শাখার রোকসানা আক্তার দিতি, পাহাড়তলী শাখার মো. সজিদ হোসেন স্বাক্ষর, মো. নাছির উদ্দিন, চকবাজার শাখার ফরহাদুল হাসান মোস্তফা, সমর দাশ, বাঁশখালী শাখার মো. রকিব হাসান, বন্দর শাখার মো. আবদুল কাদের জাবেদ, হাজী আহমদ শরীফ, সদরঘাট শাখার খালেদ মাহমুদ মারুফ, আনোয়ারা থানা শাখার লায়ন সন্তোষ কুমার নন্দী, হেলাল উদ্দীন খোকন, জেসমিন আক্তার জেসি, জয়া চৌধুরী, মো. আসিফ ইকবাল, মো. জামশেদুল ইসলাম চৌধুরী, মো. মানিক, আবুল ফয়েজ, নুরুল মোস্তফা, দ্বীপ কর্মকার প্রান্ত, উৎপল কর্মকার, মো. আশরাফুল ইসলাম সোহান, জয়া সিংহ, রিনা আক্তার, মাজহারুল ইসলাম সাদ, ওয়াকার আকিব, শওকত খান, মো. সাজ্জাদ উদ্দিন, কামরুল আলম মিন্টু, লুৎফর রহমান জুয়েল, বাবু চৌধুরী, আবির, মো. আরাফাত, মো. জামাল উদ্দীন, মো. আনছারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর চৌধুরী, মোহাম্মদ রিদুওয়ান চৌধুরী, মো. নাসির, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, আলী আকবর বাবুল, সৌরভ দাশ প্রমুখ।
সভায় কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি চট্টগ্রাম জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির ৪ সদস্যের নাম ঘোষণা করেন। প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার আহ্বায়ক, প্রফেসর ড. মো. আলা উদ্দিন ও সাবেক ছাত্রনেতা হাসান মনসুর যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং মো. অলিদ চৌধুরী সদস্য সচিব। ঘোষিত কমিটি আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।