রাজধানীতে বিএনপি’র সমাবেশে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল রাতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দলীয় কর্মী হত্যার প্রতিবাদে বনানী এলাকায় বিএনপি’র মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালান। বিএনপি’র এই কর্মসূচি ঘিরে নির্ধারিত সময়ের আগে থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহড়া দিচ্ছিলেন। বিএনপি’র কর্মসূচি শেষে প্রধান অতিথি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য শেষ করার সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা হামলা চালান বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। হামলায় বিএনপি’র আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল গুরুতর আহত হয়েছেন। তার মাথা ফেটে গেছে। দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ আরও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
ওদিকে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানার বিপুলাসার এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু ও তার স্ত্রী। হামলায় বুলু গুরুতর আহত হয়েছেন।
বিএনপি নেতারা জানান, চাল, ডাল, জ্বালানি তেল ও পরিবহন ভাড়াসহ সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং দলের তিন কর্মী নিহতের প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয় গতকাল। এরই অংশ হিসেবে গতকাল সন্ধ্যার পর ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র উদ্যোগে বনানী কাকলী থেকে গুলশান দুই নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালান।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জানান, আমাদের কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই রাস্তার অপরপাশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ মিছিল করছিল। কিন্তু যখন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য প্রায় শেষ পর্যায়ে অপরদিক থেকে এসে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এই হামলায় বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার দিকে বনানীর কাকলী মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাুকর্মীরা বাংলাদেশ ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্সের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল করছে। সেখানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এমএ কাদের খান, বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন ও বনানী থানা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মাসুদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত হন।
অপরদিকে বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলর মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল বনানী কাঁচাবাজারের পাশে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে অবস্থান নেয়। এই পরিস্থিতির মধ্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউর এক পাশে মোমবাতি হাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। তখন রাস্তার উল্টোদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। রাত পৌনে আটটার দিকে কর্মসূচির প্রধান অতিথি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য শেষ করার পরপরই ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বিএনপি কর্মীরা প্রথমে আগাতে চাইলেও সব দিকে আওয়ামী লীগের অবস্থান হওয়ায় তারা ভেতরের সড়কে সরে যান। কুমিল্লায় হামলায় বুলু সস্ত্রীক গুরুতর আহত, ঢাকায় প্রেরণ বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু এবং তার স্ত্রীর ওপর হামলা হয়েছে। গতকাল বিকালে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের বিপুলাসার বাজারে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর গুরুতর অবস্থায় বরকত উল্লাহ বুলু, তার স্ত্রীসহ আহতদের ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। হামলায় স্থানীয় বিপুলাসার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ হোসেনসহ অন্তত ৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। জানা গেছে, সস্ত্রীক বাড়ি থেকে ঢাকা ফেরার পথে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে বিকাল ৫টার দিকে বিপুলাসার বাজারে পৌঁছালে স্থানীয় বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ হোসেনের অনুরোধে যাত্রা বিরতি করেন।
এ সময় বাজারের মক্কা হোটেলে তারা চা-নাস্তা খেতে বসলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের উপর হামলা চালায়। এতে বরকত উল্লাহ বুলু, তার স্ত্রী ও বিপুলাসার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ হোসেন রক্তাক্ত জখম হন। বরকত উল্লাহ বুলুর ছেলে জানান, ‘নোয়াখালী থেকে ঢাকায় ফেরার পথে হামলায় মা ও বাবা দু’জনই গুরুতর আহত হয়েছেন। জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী এ হামলা করেছে। তাদের ওপর লোহার রড ও লাঠিসোটা দিয়ে হামলা করা হয়। এতে বাবার মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে, সম্ভবত তার ডান হাত ভেঙে গেছে।’ তিনি আরও জানান, সঙ্গে থাকা আরও ৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা হলো মোস্তফা রাজু, ফারুক ও গাড়ি চালক আলী। মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহ সুলতান খোকন বলেন, শনিবার বিকালে নোয়াখালী থেকে সস্ত্রীক ঢাকায় ফিরছিলেন বরকত উল্লাহ বুলু। পথে গাড়ির চাকা পাংচার হলে তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতা শরীফ হোসেনকে ফোন দেন। এ সময় শরীফ সাহেবের চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
তারা চা-নাস্তা খেয়ে বের হওয়ার সময় স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা, লোহার রড নিয়ে হামলা চালায়। স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে কুমিল্লা আনা হয়। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মনোহরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘বরকত উল্লাহ বুলুর ওপর হামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ ঘটনায় আমাদের নেতাকর্মী জড়িত বলে মনে হচ্ছে না। আমি একটু আগে হামলার কথা শুনলাম। ঢাকায় অবস্থান করায় এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানি না।’ এ বিষয়ে নাথেরপেটুয়া ফাঁড়ি ইনচার্জ জাফর ইকবাল বলেন, কে বা কারা হামলা চালিয়েছে জানিনা। খবর পেয়ে নাথেরপেটুয়া ভূঁইয়া মেডিকেলে বরকত উল্লাহ সাহেবকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আলম বলেন, তিনি কোনো ইনফরমেশন ছাড়াই স্থানীয় মক্কা হোটেলে এক বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় হামলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কে বা কারা হামলা চালিয়েছে তা আমরা জানি না। আমাদের কাছে এ বিষয়ে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করছি আমরা।










