চট্টগ্রামে অর্ধশত বেড়ালের ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী

করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে সব যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন বাসায় সময় কাটছিল না লাইহার। সময় কাটাতে স্বামী পায়েল লাইহাকে পাখি উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তবে পেট শপে গিয়ে তার ছোট একটি পারসিয়ান বিড়ালকে ভালো লেগে যায়। পায়েল পাখি কেনার সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে লাইহার জন্য দেড় মাস বয়সী পারসিয়ান জাতের বিড়াল কেনেন।

এরপর থেকে বিড়ালের দেখাশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন লাইহা। বাচ্চা বিড়ালের নাম রাখেন এঞ্জেল। এরপর পুরো করোনার বছর এঞ্জেলকে নিজের সন্তানের মতো বড় করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন জাতের ৫টি বিদেশি বেড়াল পালছেন লাইহা ।

এ প্রতিবেদককে বিড়াল নিয়ে তার অনুভূতি জানাচ্ছিলেন লাইহা আর পায়েল। বার্ডস অ্যান্ড পেট ক্লিনিক আয়োজিত বিড়াল প্রদর্শনীতে অংশ নেন এ দম্পতি।

শুক্রবার দিনব্যাপী প্রদর্শনীতে বিভিন্ন জাতের অর্ধশত বিড়াল নিয়ে আসেন প্রাণীপ্রেমীরা।

সরেজমিন প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট টেবিলে প্রায় ৫০টি বিভিন্ন প্রজাতির বিড়ালসহ তাদের মালিকরা বসে আছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন বিড়ালপ্রেমীরা। কেউ কেউ বিড়ালগুলোকে ছুঁয়ে দেখছেন, কেউ কোলে নিয়ে আদর করছেন।

উত্তর কাট্টলী থেকে শিশুকন্যা অত্রী শীলকে নিয়ে বিড়ালের প্রদর্শনীতে আসেন মা তণ্বিতা শর্মা। তিনি বলেন, ছোট বাচ্চারা বিড়াল এমনিতেই পছন্দ করে। কিন্তু ভাড়া বাসায় বিড়াল পালাটা একটু কষ্টকর। তাই এখানে বিড়ালের প্রদর্শনী হচ্ছে শুনে পরিবার নিয়ে দেখতে চলে এলাম। আমার মেয়ে বিড়ালগুলোকে কাছে পেয়ে খুব খুশি হয়েছে।

হালিশহরের বাসিন্দা সুকন্যা বলেন, আমার বাসায় বিড়াল আছে, কিন্তু আমি ঠিক যত্ন নিতে না পারায় প্রায় অসুস্থ হয়ে যায় তারা। এখানে এসে আমি উপস্থিত ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন পরামর্শ পেলাম কিছু ওষুধ ও নিয়ে নিলাম।

সিটি গেইট এলাকা থেকে নিজের বিড়াল ভুতুকে নিয়ে মেলায় আসা ফাহমিদা চৌধুরী বলেন, গত বছর বাসার পাশে ছোট দেশি বিড়ালের বাচ্চাকে কিছু পথ শিশু গলায় দড়ি বেঁধে টানাহ্যাঁচড়া করছিল। তা দেখে আমার খুব খারাপ লাগে এবং আমি কিছু টাকা দিয়ে বিড়ালটিকে বাসায় নিয়ে আসি। বাসায় আনার পর দেখতে পাই তার পা-গলাসহ নানা স্থানে আঘাতের চিহ্ন। দ্রুত তাকে নিয়ে আমি ডাক্তার দেখালে তারা জানান বিড়ালের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দরকার। আমি বিড়ালটিকে আমার কাছে রেখে চিকিৎসা করাই। তত দিনে বিড়ালটির নাম রাখি ভুতু। সে আমিসহ আমার পরিবারের সবাই একটা আত্মার সম্পর্কে জুড়ে যায়। এভাবে গত এক বছর ধরে সে আমাদের সঙ্গে থাকে-খায়, আমাদের সঙ্গেই ঘুমায়।

ফাহমিদা আরো বলেন, এরপর থেকে বিড়ালের প্রতি আলাদা ভালো লাগা থেকে আমি শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অবহেলিত প্রাণীর তথ্য পেলে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসি এবং চিকিৎসা করিয়ে কোনো ভালো বাসায় অ্যাডপশনে দিয়ে দিই। শুধু দিয়েই আমি চলে আসি না। এরপর থেকে নিয়মিত সেসব বিড়ালের কেমন যত্ন হয় তার খবর রাখি। সময়ে সময়ে সেসব বাসায় গিয়ে বিড়ালগুলো দেখেও আসি।

তানিয়া আক্তার নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, আমার বিড়াল সিম্বার বয়স যখন দেড় মাস তখন থেকে আমি তাকে পালতে নিয়ে আসি। অথচ এর আগে বিড়াল পালার অভিজ্ঞতা নেই আমার। কিন্তু সে আসার পর থেকে তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তার থাকা-খাওয়া সবকিছু আমি দেখি। আমি না থাকলে আমার মা তার খেয়াল রাখে। এভাবে তার সঙ্গে আমাদের একটা মায়া জড়িয়ে গেছে।

বিড়াল প্রদর্শনীর মূল আয়োজক বার্ডস অ্যান্ড পেট অ্যানিমেল ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ডাক্তার সাদ্দাম হোসেন বলেন, এ প্রদর্শনী আয়োজনের মূল কারণ হচ্ছে বিড়ালপ্রেমীদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করা এবং পশু-প্রাণীর বিভিন্ন রোগ ও এর থেকে পরিত্রাণের বিষয়গুলো সঠিক ভাবে জানা। তা ছাড়া মানুষ এখন অনেক প্রাণী পালতে চায়। কিন্তু সঠিক পদ্ধতি না জানায় অনেকে পালন করতে না পেরে প্রাণীগুলোকে নিজের অজান্তে অসুস্থ করে ফেলে বা তারা মারা যায়। তাই আমার সহকর্মী ডাক্তার ও প্রাণীপ্রেমীদের নিয়ে আমি এই আয়োজন করি।

তিনি আরো বলেন, প্রায় ৫ হাজার মানুষ এই বিড়াল প্রদর্শনীতে আসে এবং শতাধিক প্রাণীকে আমরা বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি।