এজাজ ইউসুফী ও ওবায়েদ আকাশসহ আট সম্পাদক পেলেন সম্মাননা

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত ছোটকাগজ নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজনসহ গুরুত্বপূর্ণ ছোটকাগজকে সম্মাননা জানানোর জন্য ‘লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনী ও সম্মাননা-২০২২’ আয়োজন করেছে।

মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে লিটল ম্যাগাজিন সম্মাননা প্রদান ও আট শতাধিক লিটলম্যাগ সংখ্যা নিয়ে চিত্রশালার ৬নং গ্যালারিতে সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট কবি ও লেখক সৈকত হাবিব। আলোচনায় অংশ নেন অমিত্রাক্ষর সম্পাদক আমিনুর রহমান সুলতান, ‘লোক’ সম্পাদক অনিকেত শামীম। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সচিব মো. আছাদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবি সৌম্য সালেক।

সম্মাননাপ্রাপ্ত নির্বাচিত লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকরা হলেন- শহীদ ইকবাল সম্পাদিত ‘চিহ্ন’; এজাজ ইউসুফী সম্পাদিত ‘লিরিক’; ওবায়েদ আকাশ সম্পাদিত ‘শালুক’, আবদুল মান্নান স্বপন সম্পাদিত ‘ধমনি’; মিজানুর রহমান নাসিম সম্পাদিত ‘মননরেখা’ এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিনটি লিটল ম্যাগাজিনকে সম্মাননার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে, জেলা শিল্পকলা একাডেমি রাজশাহী থেকে প্রকাশিত আসাদ সরকার সম্পাদিত ‘মহাকালগড়’; জেলা শিল্পকলা একাডেমি সিলেট থেকে প্রকাশিত অসিত বরণ দাশ গুপ্ত সম্পাদিত ‘সুরমাকপোত’ এবং মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘আরণ্যক’।

সম্মাননার জন্য লিটলম্যাগাজিন নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেছেন বিশিষ্ট লেখক-গবেষক জনাব মফিদুল হক, বিশিষ্ট অনুবাদক ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আবদুস সেলিম এবং কবি ও অধ্যাপক খালেদ হোসাইন। সম্মাননা হিসেবে পাঁচটি লিটলম্যাগ সম্পাদককে পঞ্চাশ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচিত তিনটি লিটলম্যাগাজিন সম্পাদককে পাঁচিশ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হবে। লিটলম্যাগাজিনের আট শতাধিক সংখ্যা নিয়ে ১ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় চিত্রশালার ৬নং গ্যালারিতে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

মুল প্রাবন্ধিক সৈকত হাবিব বলেন, লিটল ম্যাগাজিন আয়তনে ঢাউস হচ্ছে, যতো না মানে আর গুণে। তাই সংখ্যা পৃষ্ঠা নিয়ে লিটলম্যাগকে বিচার করা যাবে না। মানে আর গুণে বিচার করতে হবে।

সবাইকে সংস্কৃতির পাশে থাকতে হবে উল্লেখ করে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, শিল্পের বিকাশে লিটল ম্যাগাজিন অসাধারণ অবদান রেখে চলেছে। তিনি বলেন, দেশে ষাটের দশক থেকে একুশের চেতনাকে ধারণ করে লিটল ম্যাগাজিন চর্চা প্রসার লাভ করে। বিশিষ্ট কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবীরা কোনো না কোনোভাবে একসময় এসব ছোটকাগজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাড়া-মহল্লা থেকেও বিভিন্ন দিবসে ও আয়োজনে একসময় ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো। আশির দশকে বাংলাদেশে লিটল ম্যাগাজিন চর্চা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। প্রতি বছর এই সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে আমরা তাদের প্রত্যেকের কষ্টের পাশে দাঁড়াতে চাই।

বক্তারা বলেন, শিল্প-সাহিত্য চর্চার বিকাশে লিটল ম্যাগাজিন তথা ছোটকাগজ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল চর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠন বা গোষ্ঠীর মুখপাত্র হিসেবেও লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ পেয়ে থাকে।

প্রথাবিরোধী ও উদ্ভাবনশীল লেখনীর বিকাশ ঘটাতে লিটল ম্যাগাজিনের উদ্ভব, লিটল ম্যাগাজিনকে অনুপ্রেরণা দেয়ার সময় এসেছে এমন মন্তব্য করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মো. আখতারুজ্জামান বলেন, গণতন্ত্র, সামাজিক সাম্য ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও ছোটকাগজ নতুন প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করে থাকে। এ দেশের গণ-আন্দোলন ও সংগ্রামের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সময় ছোটকাগজ কর্মীরা ইতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নতুন ধারা, নতুন মত এবং মতবাদ চর্চা ও ঘোষণার ক্ষেত্রে ছোটকাগজ সংশ্লিষ্ট মত ও ধারণার সপক্ষে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে থাকে। ছোটকাগজ থেকে শিল্প-সাহিত্যের সমকালীন গতি-প্রকৃতি ও প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। শিল্প-সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে ছোটকাগজ প্রকাশের ধারাবাহিকতা অত্যন্ত জরুরী।