বৃটেনে ইশরাত জাহানের সফলতার গল্প

এটি ছিল একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ইমিগ্রেশনের মামলা। যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত অভিবাসী আইনজীবী ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন ও তাঁর লিগ্যাল টিম সম্প্রতি ১০ বছরের আইনগত বসবাসের ভিত্তিতে একজন ছাত্রীর জন্য স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন, যদিও তিনি গত ৯ বছর ধরে বৃটেনে ছিলেনই না, যা হোম অফিসের একটি বেআইনি সিদ্ধান্তের কারণে হয়েছিল। বাংলাদেশি ছাত্রী ইশরাত জাহান বাবা মার কষ্টার্জিত অনেক অর্থ খরচ করে আইনে ডিগ্রি নিয়ে ব‍্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ২০১৫ সালে তার ভিসা বাতিল করে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল হোম অফিস। তাঁকে ভিসা বাড়ানোর সময় টোয়েক ইংলিশ সার্টিফিকেট জমা দিয়ে প্রতারণা করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়।

ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন ট্রাইব্যুনালে প্রতিনিধিত্বের পর, ২০১৯ সালে বিদেশে থাকা অবস্থায় ভিসা কর্তন করে ২০১৫ সালে বৃটেন ত‍্যাগে বাধ্য করাকে বেআইনি ঘোষণা করে তার আপিল মঞ্জুর হয়। কিন্তু তাকে যুক্তরাজ্যে ফেরত আনতে আরও একটি দীর্ঘ লড়াই করতে হয়। বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে, কারণ সাম্প্রতিক দীর্ঘস্থায়ী নিয়মের পরিবর্তন তার স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে।শেষ পর্যন্ত গত মার্চে দেশ থেকে আসার সিদ্ধান্ত পেলেও তিনি এসময়কালে তার বিবাহিত জীবনে জন্ম নেয়া ছোট্ট শিশুকে ছাড়া আসতে পারছিলেন না। এদিকে একবছর আগে ছাত্র ভিসায় ব‍্যারিস্টারী পড়তে আসা তার স্বামীর ভিসা শেষ হতে চলেছিল দেড় মাসের মাথায়। তার আইনজীবীর অনেক চেষ্টার পর তার এবং তার শিশুকে একমাসের ভিসা দিয়ে আসতে দেয়া হয়। দেশে আসার পর তার জন্য আবেদন করলে গত মে মাসে কাজ করার ও সরকারি সব সুবিধা পাওয়ার সুযোগসহ ইমিগ্রেশন রুলের বাইরে তিন বছরের বিশেষ ভিসা দেয়া হয়। এরপরও তার লিগ্যাল টিম তাকে ১০ বছরের আইনি বসবাসের ভিত্তিতে ইমিগ্রেশন রুলের আওতায় স্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন জানান। এক্ষেত্রে আবারো বাধা আসে। কারণ গত এপ্রিল মাস থেকে ১০ বছরের ভিত্তিতে স্থায়ী হওয়ার নিয়ম অনুযায়ী তিনি সফল না হওয়ায় বেশ ঝুঁকি ছিলো, কেননা নতুন নিয়ম অনুযায়ী বৃটেনের বাইরে থাকার একটা সবোর্চ্চ নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং তিনি শেষ পর্যন্ত যে ষ্ট‍্যাটাস পেয়েছেল তাতে ১২ মাস থাকতে হবে। বড় একটা বিষয় ছিল, তার স্থায়ী বসবাসের অনুমতি না পেলে তার শিশু ও স্বামীর ইমিগ্রেশন অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। কাজেই সব বিবেচনায় তার লিগ্যাল টিম এটিকে শক্তভাবে এগিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত আইনী যুক্তিতর্কসম্পন্ন একটি শক্তিশালী আবেদনের মাধ্যমে, তার লিগ্যাল টিম অতি সম্প্রতি সফলভাবে হোম অফিসকে তার স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন দিতে রাজি করাতে সক্ষম হয়। এই সিদ্ধান্ত কেবল তার অনাগত ভবিষ্যত পরিবর্তন আনবে না, বরং তার পুরো পরিবারের জন্যও বেশ সুফল আনবে, কারণ তার স্বামী এবং তাদের শিশু সন্তানটি এখন তার সঙ্গে বসবাসের পথে যোগ দিতে পারবে। এবং একবছর পর মা ও শিশু বৃটিশ নাগরিকত্ব পাবেন বলে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন। এই ছাত্রীটি বলেছেন আমি ভাবতেই পারিনি যে এত তাড়াতাড়ি স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাবো । অনেক সময় আমি হতাশ হয়েছি কিন্তু ব‍্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন স্যার আমাকে তাঁর উপর আস্থা রেখে আর পরম করুণাময়ের উপর ভরসা করে অবিচল উপদেশ দিয়েছেন এবং সেই উপদেশমত এগিয়েছি।
ইংল্যান্ডের সুপরিচিত প্র‍্যাকটিসিং ব্যারিস্টার, পূর্ব লন্ডনের আইনী প্রতিষ্ঠান “এম এইচ ব্যারিস্টারস” তথা চেম্বারস অব এম এম হোসেনের প্রধান, দীর্ঘদিন বাংলাদেশি কমিউনিটির সেবায় নিয়োজিত ব্যারিস্টার মনোয়ারের হোসেনের লিগ্যাল টিমের অন্য সদস্যরা হলেন ব্যারিস্টার ফায়াজ আমিন ও ব্যারিস্টার ফাহাদ রহমান।
এই অসাধারণ সাফল্যটি এই পরিবারের জন্য একটি জীবন পরিবর্তনকারী ভুমিকা তৈরি করেছে।

এটি উল্লেখ করা উচিত যে ২০১৪ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে হাজার হাজার বিদেশী শিক্ষার্থীকে ভিসা বাড়ানোর জন্য টোয়েক নামক ইংরেজি ভাষার সার্টিফিকেট ব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে অনেককে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, যাদের বৃটেনে থেকে আপিল করার অধিকার ছিল না। এটি মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। তবুও, এখনও অনেক ইমিগ্রেশন আবেদনকারী একই কারণে থাকার বা স্থায়ীত্বের অনুমতি পাচ্ছেন না।যাদের আপিল মঞ্জুর হয়, কেবল তারাই যুক্তরাজ্যে থাকতে পারে। এবং অনেকেই যারা দেশ ছেড়ে গেছেন, তারা জানতেন বা এখনো জানেন না যে বিদেশ থেকে সফল আপিলের পর তারা আবার যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতে পারবেন এবং তারা ইমিগ্রেশন ষ্ট‍্যাটাস নিয়মিত করণ এমনকি স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে পারেন, যা তাদের পরিবার এবং ভবিষ্যতের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে। এই মামলায় তরুণী এই আইনের ছাত্রী সেই হাজার হাজার ভুক্তভোগীর একজন, কিন্তু তিনি অত্যন্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন এবং অবশেষে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তার ৯ বছরের আইনগত লড়াই জিতলেন।