গ্যাসের স্মার্ট প্রিপেইড মিটারে অপচয় হ্রাস করেছে তথা সংশ্লিষ্ট এলাকায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসছে বলে যানা গেছে।
নগরের সুগন্ধা আবাসিক এলাকার গ্রাহক সিদ্দিকুর রহমান খানের বাড়িতে চার সদস্যের পরিবারে আগে দুই বার্নারের চুলা ব্যবহারে বিল দিতে হতো ৮০০ টাকা। গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে এক মাসের বেশি সময় আগে। সে মাসে তিনি গ্যাস খরচ বাবদ প্রিপেইড কার্ড দিয়েছেন ১০০০ টাকার। এর এখন প্রায় ২ মাস ১০দিন পর তা শেষ হয়েছে এ থেকে ৫৫০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
গতকাল গ্যাসের প্রিপেইড মিটার নিয়ে আলাপকালে কাছে এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান। গ্যাস বাবদ খরচ শুধু সিদ্দিকুর রহমানের একার কমেছে তা নয়, এখন নগরের হাজার হাজার গ্রাহকের গ্যাস বিল সাশ্রয় হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির কর্মকর্তারা জানান, বন্দরনগরীতে ২০১৭ সালের মে মাসে প্রিপেইড মিটার স্থাপন শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে নগরের খুলশী, হিলভিউ, নাসিরাবাদ, মুরাদপুর, হালিশহর, লালখানবাজার, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, চান্দগাঁও, কাজির দেউড়ি, পাঁচলাইশসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। গ্রাক আগাম কার্ড কিনছে তাই আগের তুলানায় তারা সাশ্রয়ী হয়ে উঠছেন, অপচয় কম হচ্ছে এতে করে খরচও কমে আসছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে স্বল্প পরিসরে প্রিপেইড সিস্টেমে বিল আদায় শুরু হয়। বিল প্রদানের জন্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির কার্যালয়ের পাশে বিল রিচার্জ সেন্টার খোলা হয়েছে। এখন নগরীর ৯ হাজার আবাসিক গ্রাহক প্রিপেইড মিটারে গ্যাসের বিল দিচ্ছেন। অল্প সময়ের মধ্যে মধ্যে ৬০ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের ব্যবহারের আওতায় আসবে।
এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত এক বছরে নগরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ৪০ হাজার ৩০০টি মিটার স্থাপন করা হয়েছে। নগরে মোট ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ চলছে। এই লক্ষ্যে প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারীদের গ্যাসের বিল কম আসছে। যারা এতদিন ডাবল বার্নার চুলার জন্য ৮০০ টাকা বিল দিতেন, তাঁরা এখন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বিল রিচার্জ করছেন। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের কারণে আবাসিক গ্রাহকরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন। এতে বিল কম আসছে। অপরদিকে গ্যাসও সাশ্রয় হচ্ছে অনেক।’
‘রমজান মাসের কারণে প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপনের কাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। আশা করি ঈদের পর প্রকল্পের কাজে আরো গতি আসবে।’-যোগ করেন সরোয়ার হোসেন।
কর্মকর্তারা জানান, আমদানি করা ব্যয়বহুল তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে চট্টগ্রামে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ২৪৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে জাইকা ১৫৪ কোটি ১১ লাখ টাকা প্রদান করছে। বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৮১ কোটি ৪৫ লাখ এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি দিচ্ছে ১০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ করছে। মিটারগুলোও জাপান থেকে আনা হয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তির এসব মিটার প্রসঙ্গে কর্ণফুলী গ্যাসের প্রকৌশলীরা জানান, এসব প্রিপেইড মিটারে মোবাইল ফোনের মতো আগাম টাকা রিচার্জ করে গ্যাস ব্যবহার করতে হবে। প্রতিটি প্রিপেইড মিটারের গ্রাহককে একটি ‘কন্ট্রাক্টলেস স্মার্ট কার্ড’ দেওয়া হচ্ছে। এই কার্ডে টাকা রিচার্জ করতে হবে। প্রতি চার হাজার গ্রাহকের জন্য একটি করে মোট ১৫টি রিচার্জ সেন্টার বসানো হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার একটি নির্দিষ্ট ব্যাংকের শাখায় রিচার্জ সেন্টারটি বসানো হবে। ব্যাংকের ওই শাখা থেকে কার্ড রিচার্জ করে মিটারের কাছে নিয়ে গেলে মিটার রিচার্জ হয়ে যাবে। মিটার গ্রাহকদের জন্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানিতে আলাদা একটি কন্ট্রোল রুম থাকছে। ওখানেও কার্ড রিচার্জসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
জানা গেছে, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির আওতায় চট্টগ্রামে আবাসিক গ্রাহক রয়েছে পাঁচ লাখ ৯৮ হাজার। এর মধ্যে প্রথম প্রকল্পের মাধ্যমে মাত্র ৬০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সকল গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহার করতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।