বেশিরভাগ ভবনেই নির্মাণ এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় অনেক অনিয়ম

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ২০০টির বেশি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন পরিদর্শন করে এর বেশিরভাগ ভবনেই নির্মাণ এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় অনেক অনিয়ম পাওয়া গেছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বিবিসিকে শনিবার এই তথ্য জানিয়েছেন।

মার্চ মাসের শেষে ঢাকার বনানীতে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ২৬ জনের নিহত হওয়ার ঘটনার পর নগরীর বাণিজ্যিক ভবনগুলোর নিরাপত্তা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

রাজউকের ২৪টি টিম গত দুই সপ্তাহে দু’শটির মত বহুতল ভবন পরিদর্শন শেষ করে সরকারের কাছে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে বহু ভবনেই নিরাপত্তার নানাবিধ ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেছেন, বহুতল ভবনগুলোর নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানান অনিয়ম পাওয়া গেছে।

“আমাদের ২৪টি পরিদর্শন টিম ঢাকার অধিকাংশ বহুতল ভবন পরিদর্শন করে বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি, নিয়ম-অনিয়মকে বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট দাখিল করেছে।আমরা এই রিপোর্টগুলির ভিতর থেকে তিনটি ক্যাটাগরিতে আলাদা আলাদাভাবে বাছাই করছি।”

“প্রথমত যারা অনুমোদন ছাড়া বহুতল বা উর্ধ্বমুখী ভবন নির্মাণ করেছেন, সে বিষয়টিকে চিহ্নিত করেছি।কোনো কোনো ভবনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নাই। কোনো কোনো ভবনে জরুরি বের হওয়ার রাস্তায় সমন্বয় নাই। কোনো কোনো ভবনে পাওয়া গেছে, যেখানে গাড়ি রাখার গ্যারেজ থাকার কথা, সেখানে তারা গ্যারেজের জায়গাটা বন্ধ করে অন্যান্য বাণিজ্যিক স্থাপনা করেছেন।আমরা এটাকে কয়েকটি ক্যাটাগরি করে আলাদাভাবে রিপোর্ট প্রস্তুত করছি।”

কতগুলো বহুতল ভবন পরিদর্শন করে এই প্রতিবেদন করা হয়েছে, আর তাতে অনিয়মের মাত্রা কতটা পাওয়া গেছে?

এসব প্রশ্নে মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেন,”বহুতল ভবন বলতে ১০তলার উর্ধ্বে যে সব ভবন, সেগুলোর দুশ’রও বেশি ভবন পরিদর্শনের রিপোর্ট ইতিমধ্যে এসেছে। আরও কয়েকটি টিম এখনও রিপোর্ট দাখিল করেনি। তাতে ভবন পরিদর্শনের সংখ্যা আরও বাড়বে।”

পূর্তমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, “পরিদর্শন করা দুইশ’র বেশি ভবনের অধিকাংশ ভবনই কোনো কোনো ক্ষেত্রে গুরুতর, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অল্প পরিসরে হলেও নকশার পরিবর্তন ঘটিয়ে নির্মাণ করা করা হয়েছে এবং বিল্ডিং কোডে যেসব বিষয় ইমারতে থাকার কথা, সেগুলি যে অবস্থায় থাকার কথা, সে অবস্থায় পাওয়া যায়নি।”

নগরীর বাণিজ্যিক ভবনগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় যে ঘাটতি আছে, সেটা উদ্বেগজনক বলেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

দমকল বাহিনীও বাণিজ্যিক ভবনগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দেখেছে। এই বাহিনীর একজন কর্মকর্তা মেজর শাকিল নেওয়াজ জানিয়েছেন, নগরীর ৯৫% থেকে ৯৬% বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বলে তারা দেখেছেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের অধ্যাপক ইশরাত ইসলাম বলছিলেন, কর্তৃপক্ষ সদিচ্ছা দেখালেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় ঘাটতি দ্রুত দূর করা যেতে পারে।

কিন্তু ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম বা ব্যত্যয় ঘটে গেছে, কঠোর সিদ্ধান্ত ছাড়া সেগুলো ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন।

“রাজউকের পরিদর্শকে পরিদর্শন ছাড়া কোনো ভবন নির্মাণ হয় না। কারণ অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু খুবই নগণ্যসংখ্যক ভবনই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিয়েছে।