করোনার দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বর্তমান ধরন ডেল্টার চেয়ে ভয়ংকর নয়, তবে পুনরায় মিউটেশনের মাধ্যমে ভয়ংকর হতেও পারে বলে জানিয়েছেন অণুজীববিজ্ঞানী ও সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল।
করোনাভাইরাসের সবশেষ এই ভ্যারিয়েন্ট কোভিড জীবাণুর সবচেয়ে বেশি মিউটেট হওয়া সংস্করণ।
এর মিউেটশনের তালিকা এত দীর্ঘ যে বিজ্ঞানীরা একে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেছেন। ইতোমধ্যে দেশে ওমিক্রন প্রতিরোধে ১৫ দফা পদক্ষেপ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের কথা বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সোমবার (২৯ নভেম্বর) করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরন কতটা ভয়ংকর জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল বাংলানিউজকে বলেন, ওমিক্রনের সিকুয়েন্সিং ডাটা আমি দেখেছি, করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের সঙ্গে তুলনা করে দেখলাম, ওমিক্রনের প্রায় ৫০ বার মিউটেশন হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টা মিউটেশন হয়েছে স্পাইক প্রোটিনে। আবার ১০টা মিউটেশন হয়েছে রিসেপ্টার ডোমেইন সাইডে। ভাইরাসের যে অংশটি প্রথম মানুষের দেহকোষের সঙ্গে সংযোগ ঘটায় তার নাম রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইন। ওমিক্রনে ডেল্টার চেয়ে একটা পজিটিভ চার্ট বেশি। ডেল্টা ধরনে খুব শক্তিশালী একটা স্ট্রেইন ছিল পি৬৮১ পজিশনে, ওমিক্রনে এটা খুব বেশি শক্তিশালী নয়, দুর্বল। এটা যদি হলমার্ক হয়, তাহলে বর্তমানের ওমিক্রন ধরন ডেল্টার মতো ভয়ংকর নাও হতে পারে বলে আমার ধারণা। ওমিক্রন বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা এখনও হয়নি, তবে বর্তমান সিকোয়েনসিংয়ে আমি যা দেখলাম, তাতে এটা ডেল্টার চেয়ে বেশি ভয়ংকর নয়, তবে সে আবারও পরিবর্তিত হতে পারে।
করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে টিকা এবং ওষুধ কতটা কার্যকর জানতে চাইলে এই অণুজীববিজ্ঞানী বলেন, বর্তমানে করোনার যেকোনো টিকা প্রায় ৭০ শতাংশ সুরক্ষা দেবে। শুধু ওমিক্রন নয়, যদি আগের ওয়ান ভাইরাসও আসে মানুষের শরীরে ঢুকলে সে গ্রো করবে এটা নিশ্চিত। তবে যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি রয়েছে, তাদের শরীরে ভাইরাসটি ঢুকে যখন রক্তের সংস্পর্শে আসবে, তখনই ভাইরাসটি মারা যাবে। রক্তের সংস্পর্শে আসার আগ পর্যন্ত ভাইরাসটি গ্রো করতে থাকবে, সেটা যেকোনো ভেরিয়েন্টেরই হোক না কেন।
তিনি আরও বলেন, ওমিক্রন যদি বাংলাদেশে আসেও, ভাইরাসটি নিঃসন্দেহ গ্রো করবে। তবে আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি রয়েছে, সেটা হাই লেভেল, লো লেভেল কিংবা মেমোরি সেল পর্যায়ে থাকুক না কেন। যেহেতু আমাদের শরীরে মেমোরি সেল রয়েছে, তা আমাদের সাহায্য করবে। তবে মার্চ মাসের মতো করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। তবে যাদের টিকা নেওয়া নেই, কিংবা শরীরে অ্যান্টিবডি বা মেমোরি সেল নেই, তার ক্ষেত্রে জটিলতা হতে পারে।