সন্তান হত্যার চেষ্টা, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

স্ত্রীকে ঘরে তালাবন্দী রেখে নিজের দুই মাসের শিশু সন্তানকে বালিশ-চাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে স্বামী আরাফাতুল ইসলাম মোর্শেদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন স্ত্রী নুরজাহান আক্তার কলি।

সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে এ মামলা করা হয়।

সন্তানকে হত্যাচেষ্টার পাশাপাশি স্ত্রীকে এর আগেও সন্তানসহ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে গায়ে গরম ভাতের মাড় ফেলে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে স্বামীর বিরুদ্ধে। মামলায় নির্যাতিতা ওই নারীর শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর ও খালা শাশুড়িকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, এতিম নুরজাহান আক্তার কলিকে আশপাশের লোকজন ধারদেনা করে টাকা জোগাড় করে বিয়ে দেন খুলশী থানার লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকার আরাফাতুল ইসলাম মোর্শেদের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকেই কলিকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করতে থাকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গর্ভে সন্তান আসলে স্বামী একদিন যৌতুকের দাবিতে সন্তান নষ্ট করে ফেলার উদ্যোগ নেন। স্ত্রী রাজি না হওয়ায় তার ওপর নির্যাতন নেমে আসে। ৯৯৯ এ ফোন করে তখন বেঁচে যান ওই নারীসহ তাদের গর্ভের সন্তান। সামাজিকভাবে বিচারে স্ত্রীর ওপর আর নির্যাতন হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিলে বেকার স্বামী মোর্শেদ প্রায়ই স্ত্রীকে মারধর করত। পিতা-মাতা না থাকায় সন্তান আর নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কখনো উচ্চবাচ্য করতেন না কলি।
গত ১০ জুলাই গর্ভের সন্তান ইয়াসিন পৃথিবীর আলো দেখলে কলির ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বাড়িভাড়ার টাকাসহ যৌতুক দিতে না পারলে মেরে ফেলার হুমকির মধ্যেই চলতে থাকে কলির যন্ত্রণার জীবন। একদিন কলিকে মারধর করে শিশুসন্তানসহ ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় শাশুড়িসহ স্বামী মোর্শেদ। শুধু তাই নয়, গরম ভাতের মাড় ঢেলে দেয় মাটিতে পড়ে থাকা কলির গায়ে ও পায়ে।

সন্তানের বয়স যখন দুই মাস ছুঁই ছুঁই করছে এমন এক সময়ে গত ৫ অক্টোবর স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজন আবার মারধর শুরু করেন কলির ওপর। এবার স্ত্রী কলিকে যৌতুকের জন্য শুধু মারধর নয়, কথা কাটাকাটির জের ধরে ঘরের ভেতর তালাবদ্ধ করে রেখে প্রায় ২ মাস বয়সী শিশুটিকে বালিশ-চাপা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে মোর্শেদ। কলির চিৎকারে আশপাশের লোকজনসহ কলির দূরসম্পর্কের আত্মীয় স্বজন এসে ৯৯৯ এ ফোন করলে পালিয়ে যায় মোর্শেদ। আহত কলিকে সেখান থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, যৌতুকের জন্য অনেক ধরনের নির্যাতনের কথা আগে শুনেছি। কিন্তু স্ত্রীকে ঘরে বন্দী করে ২ মাসের শিশু সন্তানকে বালিশ-চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনা আগে কখনো শুনিনি। পাষণ্ড স্বামী দীর্ঘদিন ধরে বেকার থাকায় স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে মারধর করত। আর তাতে সায় দিয়ে স্ত্রীর ওপর নির্যাতনে সহায়তা করত শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন এবং খুলশী থানাকে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।