পাসিং পাড়া ও জাদিপাই ঝরনা

দেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম পাসিং পাড়া ও জাদিপাই ঝরনা বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত। কেওক্রাডং পাহাড় থেকে পাসিং পাড়া হয়ে জাদিপাই পাড়ার এ ঝরনাটির দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। কেওক্রাডং, জংছিয়া ও জাদিপাই নামের পাহাড়ি ছড়া (ঝিরি) মিলিত হয়ে জাদিপাই ঝরনার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রায় ২৫০ ফুট উপর থেকে কালো পাথর বেয়ে স্বচ্ছ পানির ধারা নিচে নেমে আসে। ঝরনাটি মিলিত হয়েছে সাংঙ্গু নদীর সাথে। আর কেওক্রাডং থেকে পূর্বদিকের ঢাল বেয়ে ১০-১৫ মিনিটেই যাওয়া যায় পাসিং পাড়া। যার উচ্চতা ৩০৬৫ ফুট। পাসিং পাড়া পার হয়ে খাড়া পথ নেমে গেছে জাদিপাই পাড়ায়। পথটি এতো বেশি খাড়া যে, কোনো কোনো অংশে পা ফেলা সত্যিই কঠিন। ৩০-৪০ মিনিট এ পথে হাঁটলেই জাদিপাই পাড়া।

জাদিপাই পাড়া থেকে আরও প্রায় ৩০ মিনিট হাঁটলেই কানে আসে পানির রিনিঝিনি আওয়াজ। তবে জাদিপাই পাড়ার পর থেকে পথ আর তত বিপজ্জনক নয়। অনেকটা পথই একেবারে সমতল। কিন্তু ঝরনার কাছের অংশটি খুবই বিপজ্জনক, পিচ্ছিল আর খাড়া।

jagonews24

দেশের প্রশস্ততম ও আকর্ষণীয় ঝরনাগুলোর মধ্যে জাদিপাই ঝরনা অন্যতম। আকৃতিতে দেশের সবচেয়ে বড় না হলেও গঠন আর অবস্থানের কারণে অনন্য ও অপরূপা। উঁচু পাহাড় আর চারদিকে সবুজের সমারোহ। অসংখ্য পাহাড়ের বুকে বেঁচে থাকা শত বছরের নীরবতার মাঝে ছন্দময় এক রিনিঝিনি কলতান নিয়ে লুকিয়ে আছে জাদিপাই।

পথের ক্লান্তি সবটুকু অবসাদ দূর করবে ঝরনার জল। মাঝে পাহাড়ের বুক চিড়ে স্বচ্ছ পানির ধারা পাথর বেয়ে নিচে নেমে আসে। ঝরনার প্রতিটি ভাঁজে আছে পাগল করা সৌন্দর্য। প্রায় ২৫০ ফুট উপর থেকে অবিরাম ঝরে পড়া পানির তিনটি ধাপে সূর্যকিরণ পড়তেই তৈরি হয় বর্ণিল রংধনু।

ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়ি, বাস, সিএনজি করে রুমা যাওয়া যায়। বান্দরবান শহর থেকে রুমা যেতে সময় লাগবে কম-বেশি ২ ঘণ্টার মতো। রুমা নেমে চান্দের গাড়ি করে যেতে হবে রুমাবাজার।

jagonews24

রুমাবাজার থেকে গাইড নিতে হবে। বাজারে গাইড সমিতি আছে। তাদের কাছে গেলেই গাইড পাবেন। গাইডকে সাথে নিয়ে আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য নিবন্ধন করতে হবে। বড় দল গেলে আগে থেকে একটি কাগজে সবার নাম, ঠিকানা, পেশা, ফোন নম্বর ও বাসায় যোগাযোগের নম্বরসহ একটি তালিকা আগে থেকে প্রস্তুত করে নিয়ে যেতে পারেন।

রুমাবাজার থেকে চান্দের গাড়িতে যেতে হবে বগা লেক বা যতদূর গাড়ি যায়। শীতকালে চান্দের গাড়ি বগা লেক পর্যন্তই যায়। বর্ষায় গাড়ির শেষ গন্তব্য কমলা বাজার পর্যন্ত। বাকি পথ হেঁটে যেতে হয়। পিচ্ছিল পাহাড়ি খাড়া পথে গাড়ি চালিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়ি যাত্রার পর কমলা বাজার এসে পৌঁছবেন। এরপর হেঁটে বগা লেকে উঠতে হবে। বগা লেক থেকে হেঁটে কেওক্রাডং, তারপরে পাসিং পাড়া, পাসিং পাড়া থেকে হেঁটে জাদিপাই ঝরনা।

বগা লেকে রাত যাপন করবেন। গাইডই কটেজ ঠিক করে দেবেন। বিভিন্ন ধরনের কটেজ আছে এখানে। যদি কেওক্রাডং রাত যাপন করতে চান, তাহলে কেওক্রাডং চূড়ায় ওঠার আগেই একটি রেস্টুরেন্ট পাবেন। তাদের বললে ব্যবস্থা করে দেবেন। ভাড়া বগা লেকের মতই।