বিশ্বকে বদলে দিতে শিক্ষার্থীদের বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতে হবে

বিশ্বকে বদলে দিতে শিক্ষার্থীদের বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র শেখার জায়গা নয়, এটি স্বপ্ন দেখারও জায়গা। স্বপ্ন দেখতে পারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তি। আপনি যদি স্বপ্ন দেখেন, তবে তা ঘটবেই। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন, তবে তা কখনো ঘটবে না। অতীতের দিকে নজর দিলে দেখবেন যা কিছু ঘটেছে, কেউ না কেউ আগে তা কল্পনা করেছিল। কল্পনা যেকোনো কিছু থেকে বেশি শক্তিশালী। গতকাল চীনের বেইজিংয়ে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। ভাষণের আগে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। অনুষ্ঠানে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের চেয়ারম্যান হে গুয়াংচাই ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট গং চিহুয়াং বক্তব্য রাখেন। প্রফেসর ইউনূস শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে অদ্ভুত এবং অকল্পনীয় বিষয়ে স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করেন। যদিও অনেক সময় এটি অসম্ভব মনে হতে পারে। তিনি বলেন, মানব সভ্যতার যাত্রা হলো অসম্ভবকে সম্ভব করা। সেটাই আমাদের কাজ। আর আমরাই তা করতে পারি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের ঘর মনে করি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্মানসূচক প্রফেসর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, উদ্ভাবন ও উৎকর্ষতার কেন্দ্র হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করতে পেরে আমি গর্বিত। এই সম্মাননা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় সেই প্রতিশ্রুতির কথা, যা আমি গত বছর বাংলাদেশে রূপান্তরকারী পরিবর্তনের অগ্রভাগে থাকা লাখ লাখ যুবকের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য করেছি।

ড. ইউনূস বলেন, তাদের স্বপ্ন ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার, যে দেশটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত হবে। প্রধান উপদেষ্টা তার সরকারের সংস্কার কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যেখানে উদ্যোক্তা বিকাশকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, মানুষ জন্মগতভাবে দরিদ্র নয়, বরং ভুল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে দরিদ্র হয়ে পড়ে, যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকে না। তিনি বলেন, সমাজে প্রচলিত অনেক ভুল ধারণার কারণেই মানুষ কষ্ট ভোগ করে। প্রফেসর ইউনূস বলেন, মানুষ জন্মগ্রহণ করে চাকরি খোঁজার জন্য নয়, বরং তারা সৃষ্টিশীল। মানুষকে চাকরিপ্রার্থী না হয়ে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করতে হবে। নারীদের বিপুল সম্ভাবনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, এমনকি বাংলাদেশের দরিদ্রতম নারীও মাত্র ২০ মার্কিন ডলার ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তা হতে পারে। তিনি বলেন, নারীরা বিশ্বের যেকোনো জায়গায় উদ্যোক্তা হতে পারেন। শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত? শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো- সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে বিশ্বকে পরিবর্তন করা। বিশ্বকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে কার্বনমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা তার ‘তিন শূন্য তত্ত্ব’- শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য দারিদ্র্য এবং শূন্য বেকারত্ব ও সামাজিক ব্যবসার ওপরও আলোকপাত করেন, যা সমাজের সমস্যাগুলো সমাধান করে। তিনি বলেন, সকলেরই নিজেদেরকে ‘তিন শূন্য’ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলা উচিত।

চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা: এদিকে চারদিনের সরকারি সফর শেষে চীন থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এয়ার চায়নার একটি বাণিজ্যিক বিমান শনিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ৫৭ মিনিটে বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চিফ প্রোটোকল অফিসার হং লেই বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে বিদায় জানান। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৭শে মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে আয়োজিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনের ফাঁকে তিনি বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেন। প্রধান উপদেষ্টা ২৮শে মার্চ বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। তিনি টেকসই অবকাঠামো ও জ্বালানি বিনিয়োগ, বাংলাদেশ ২.০ উৎপাদন ও বাজার সুযোগ এবং সামাজিক ব্যবসা, যুব উদ্যোক্তা এবং তিন শূন্যের বিশ্ব- এসব বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তিনটি গোলটেবিল বৈঠকেও যোগ দেন।