অস্ট্রেলিয়ায় অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করা বাংলাদেশিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই করেছে বাংলাদেশ।
সোমবার (২৪ মার্চ) সচিবালয়ে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া সরকারের মধ্যে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে অস্ট্রেলিয়া গমনকারীদের দ্রুত প্রত্যাবর্তন সংক্রান্ত ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর ফর দ্য রিটার্ন অব বাংলাদেশি সিটিজেন্স টু বাংলাদেশ’ সই হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে এতে সই করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সই করেন অস্ট্রেলিয়ার জয়েন্ট এজেন্সি টাস্কফোর্সের ডেপুটি কমান্ডার মার্ক হোয়াটচার্চ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি সাংবাদিকদের বলেন, অস্ট্রেলিয়ান বর্ডার ফোর্সের একটা টিম এসেছে বাংলাদেশে। সীমান্ত, ভিসা ইত্যাদি সমস্যা এবং আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়ে আলাপ করার জন্য তারা এসেছেন। অস্ট্রেলিয়া লাগোয়া অনেকগুলো দেশ রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া কাছাকাছি দেশ। যেখান থেকে খুব দ্রুত নৌপথে সেখানে চলে যাওয়া যায়।
তিনি বলেন, স্থলপথে তারা অস্ট্রেলিয়ার কাছাকাছি গিয়ে নৌপথে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করত। সাধারণত তারা ধরে যে দেশের লোক সেখানে তারা পাঠিয়ে দেয়। আমাদের ক্ষেত্রে সেটা করার কথা। কিন্তু তারা যেহেতু আমাদের সঙ্গে সম্পর্কটার মূল্য দেয়, তাই তারা এসেছে যে এটার কি করা যায়।
সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা বললাম, স্ট্যান্ডার্ড যে প্রসেডিং আছে সেটা ঠিক আছে। এর সঙ্গে উৎস দেখা দরকার যে, মানুষ কেন দৌড়াচ্ছে সেখানে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল বুঝিয়ে সেখানে নিয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়া কোন ব্যাপার না, ওয়ান-টুতে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি- এসব বলে লোকগুলোকে নিয়ে যাচ্ছে। ওখানে গিয়ে দেখতেছে কি বিপদে তারা পড়েছে!
মূলত দালালদের খপ্পরে পড়ে তারা এই অবস্থায় এসেছে। অবৈধ প্রবেশের সময় তারা তাদের ধরেছে বলে জানান নাসিমুল গনি।
স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, এরই মধ্যে কেউ ঘর-বাড়ি বিক্রি করেছে। কেউ জমি বিক্রি করেছে, টাকা ধার করেছে, মোটামুটি সর্বস্বান্ত হয়েছে। এই গল্পগুলো তারা সেখানে শুনেছে। তারা বিস্তারিত অনেক এক্সারসাইজ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা পারস্পর একমত হয়েছি যে, যখন জানবো যে আমাদের দেশের লোক তখন তাদের আমরা গ্রহণ করব। কী পদ্ধতিতে আমরা তাদের গ্রহণ করবো সেটার ফাংশনাল পার্টটা আজকে সই হয়েছে।
এ চুক্তির আওতায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া কী জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, তারা প্রথমে আমাদের কাছে নাম পাঠাবে। নাম এই, ঠিকানা এই, আমরা তখন তদন্ত করবো যে এই নামে আসলে কেউ আছে কি না। সত্যি সে বিদেশে আছে কি না। যখন আমরা দেখবো এই নামে একটা লোক আছে, ছবিটাও মিলছে, তখন আমরা বলবো ঠিক আছে তোমরা কবে পাঠাবে বলো। তারা পাঠালে পরে আমরা এদের গ্রহণ করবো।
‘তারা (বাংলাদেশি) এখন সেখানে বিভিন্ন জায়গায় ডিটেনশন সেন্টারে আছে। তারা উপলব্ধি করেছে এই লোকগুলো পরিস্থিতির শিকার। আমরা এখন কিভাবে সমাজের লোকগুলোকে পুনর্বাসন করতে পারি। অন্যভাবে বলা যায় আমরা কিভাবে তাদের ক্ষতিপূরণ করতে পারি। এটাতে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য একটা অঙ্গীকার করেছি।’
ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে কি কোনো আর্থিক ভ্যালু থাকবে কি না- এ বিষয়ে নাসিমুল গনি বলেন, পুনর্বাসনের মেকানিজমটা আমরা আর্থিক ভ্যালু দিয়ে হিসাব করতে যাবো না। এ বিষয়ে তো আন্তর্জাতিক কতগুলো প্রটোকলস আছে, সেটার বিষয়ে উভয়পক্ষ যেভাবে একমত হয়, সর্বোচ্চ যতটুকু সুবিধা আমরা নিতে পারি। অন্য যারা এভাবে পাঠিয়ে দেয় তাদের কাছ থেকে কোন ধরনের কিছু পেতাম না। এটাতো আমার হাতে একটা উদাহরণ এসে গেল।
তিনি বলেন, আমি বলতে পারি এটা আমার জানামতে প্রথম এই ধরনের কোনো চুক্তি। আমার জানার ভুল হতে পারে। এক্ষেত্রে কী কারণে এটা হচ্ছে, সেগুলো অনুসন্ধান করে প্রোপার প্যাকেজ নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।