ইন্দোনেশিয়ায় বন্যা: মৃতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে, নিখোঁজ শত শত মানুষ

ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে, শত শত মানুষ এখনো নিখোঁজ। ঘূর্ণিঝড় সেনইয়ারের প্রভাবে সৃষ্ট ভয়াবহ এই বন্যা ও ভূমিধসে দেশটির সুমাত্রা দ্বীপে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে। নিখোঁজ মানুষদের অনেকেই ভূমিধসে মাটির নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও ঝড়ো হাওয়ায় পুরো অঞ্চল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, আচেহ, উত্তর সুমাত্রা ও পশ্চিম সুমাত্রা প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে তাপানুলি ও সিবোলগা এলাকা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সেখানে সহায়তা পৌঁছাতে পারছে না। এ দু’টি এলাকায় জরুরি সহায়তা ও উদ্ধার কার্যক্রমে জোর দিতে হবে বলে জানান সংস্থাটির প্রধান সুহারিয়ান্তো।

সরকারি ও আন্তর্জাতিক সহায়তা আকাশপথে ও জলপথে পাঠানো হলেও অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে এখনো কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। ফলে খাদ্য ও পানির তীব্র সংকটে ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই দোকানভাঙচুর ও খাদ্য লুটের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছেন। সুমাত্রায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সহায়তা পৌঁছানোর আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়তে চাইছেন না। কারণ বন্যা থেমে যাওয়ার পরও ঘর, ফসল ও যানবাহন কাদামাটিতে ঢেকে গেছে। পশ্চিম সুমাত্রার রাজধানী পদাং থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের সুংগাই নিয়ালো গ্রামে এখনো রাস্তা পরিষ্কারকাজ শুরু হয়নি, বাইরের কোনো সাহায্যও পৌঁছায়নি।

চরম দুর্যোগের এই পরিস্থিতিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে কৌশলগত সহায়তা হিসেবে বিনামূল্যে স্টারলিংক সেবা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক।

এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ভয়াবহ দুর্যোগ
একই সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ মারাত্মক বন্যা ও ভূমিধসের মুখে পড়েছে। থাইল্যান্ডে ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে, মালয়েশিয়ায়ও প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। শ্রীলঙ্কায় ৩৩০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে। রাজধানী কলম্বোর অনেক এলাকা এখনো পানির নিচে, আর দেশটির কেন্দ্রীয় অংশের বহু গ্রাম এখনো বিচ্ছিন্ন।

ফিলিপাইনে বন্যার পর সরকারি তহবিল আত্মসাতের অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। বন্যায় সেখানে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বরাদ্দ বিপুল অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে দেশটির প্রেসিডেন্ট ফেরদিনান্দ ‘বংবং’ মার্কোস জুনিয়রের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভে উত্তেজনা বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তার নিজ দল ও পরিবারের সদস্যরাও এখন বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
এশিয়ায় দুর্যোগের ঘনঘটা বেড়ে যাওয়ার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অস্বাভাবিক ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যা প্রমাণ করছে—এই অঞ্চলে জলবায়ুর প্রভাব এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে তীব্র ও ধ্বংসাত্মক।

সূত্র: বিবিসি