মিরসরাই প্রতিনিধি: কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর, ভোরের আলো ফুটতেই জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের চর্তুদিকে কর্নফুলী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, ইছামতিসহ ৩৩ টি স্টলে অবস্থান নেয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। সময় বাড়ার সাথে সাথে সবুজ, সাদা, বেগুনী ও কমলা রঙের পোশাকে শিক্ষার্থীরা একিভূত হলো বিদ্যালয় অঙ্গনে। ডাক ঢোল বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বের হয় বর্ণাঢ্য র্যালী। বিদ্যালয় মাঠ থেকে বের হওয়া র্যালী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শেষ হওয়ার পর দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়। আহবায়ক অতিথিবৃন্দ ও বিশিষ্টজনদের আসনগ্রহণ শেষে বিভিন্ন ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ শেষে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর প্রাক্তন শিক্ষার্থী পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক প্রিয়তোষ নাথ বক্তব্য রাখেন।
এসময় স্কুল প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান, স্বীকৃতিস্বরুপ মরনোত্তর সম্মাননা, প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ, মেধা তালিকায় স্থানপ্রাপ্ত ও গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক মাহফুজুল হক মনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরিয়াল ফেলো ও সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর এ. জে. এম. শহীদুল্লাহ, ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ফিনান্সিয়্যাল অ্যাডভাইজার প্রফেসর শামস উদ দোহা।
দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী ও বিশিষ্টজন স্মৃতিচারণ, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ, উপদেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষক সম্মাননা, স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্র। মোহাম্মদ শওকত ইকবালের সঞ্চালনায় স্মৃতিচারণ করেন এডিশনাল আইজিপি ড. মেজবাহ উন নবী, প্রফেসর ডা. কাজী আব্দুল মান্নান, চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান, ছড়াকার আহমেদ জসিম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব পুলক কান্তি বড়–য়া, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের বোটানী ডিপার্টমেন্টের এসোসিয়েট প্রফেসর তাপস কুমার ভৌমিক, আব্দুল্লাহ আল মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ চৌধুরী, লায়লা আরজুমান বানু, শহীদুল ইসলাম রুবেল।
সরকারহাট নজর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৯৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী স্বাগতম বড়ুয়া বলেন, বলেন, ‘৩২ বছর পর আমার প্রাণের বিদ্যাপীঠে আসলাম। পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হলো। আমাদের এই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক প্রিয়তোষ নাথের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকে আমরা একটি সুন্দর অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করতে পেরেছি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সব ছাত্র-ছাত্রীর আজ উপস্থিতিতে সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়েছি। এই অনুষ্ঠান আমাকে নতুন করে ফিরিয়ে নিয়ে গেল স্কুল জীবনে।’
১৯৬৮ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থী কৈলাশপতি কর্মকার বলেন, ‘নিজের ৮৪ বছর বয়সে আজ আমার বিদ্যাপীঠে এসে আমি সেই শৈশব কৈশোর ফিরে গেলাম। যদিও আমার ব্যাচের সবাই আসতে পারেনি। ৮ থেকে ১০ জন বন্ধু এসেছে। তাদের সঙ্গে কৈশোরে কাটানো স্মৃতিগুলো আজ আবারও মানসপটে ভেসে উঠলো। জীবনের জন্য এমন মিলনমেলা খুবই প্রয়োজন। এই স্কুলে শুধু তিনিই নন, তার ছেলে, মেয়ে এবং নাতি নাতনীও এই স্কুলে পড়েছেন।’
২০০৮ সালের ছাত্র এডভোকেট নাজমুল হাসান বলেন, ‘এত বছর পর আমাদের পুনর্মিলনী এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। বন্ধুদের পেয়ে আমি আজ আবেগাআপ্লুত হয়েছি। আমি মনে করি এই স্কুল উপজেলার একটি সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের প্রতি এখনও যে আন্তরিক এটা আসলে বিরল।’
২০১৬ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থী নোমান বলেন, ‘আমরা আসলে এখনও শিখছি। তবে আজকে এই পুনর্মিলনীতে না আসলে অনেক কিছু অজানা থেকে যেতো। সবার সাথে দেখা হচ্ছে। সিনিয়র অনেক বড় ভাইকে চিনতাম না, আজ সবাইকে দেখছি। আমি নিজেও গর্বিত এই স্কুলে যে এতো কৃতি সন্তান আছে। এই স্কুলের অধিকাংশ প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এখানে পড়াশোনা করে।’
প্রাক্তন শিক্ষার্থী পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, মিরসরাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নজর আলী রূপজান উচ্চ বিদ্যালয়। যে বিদ্যাপীঠে সৃষ্টি হয়েছে হাজারো মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। যারা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন। এভাবে দীর্ঘ ৮৬ বছর ধরে জ্ঞান বিতরণ করা হাজার হাজার শিক্ষার্থীর প্রাণের বিদ্যাপীঠে মহামিলন মেলায় মিলিত হয়েছেন। এই মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করেছে স্কুলের ৫৭ ব্যাচের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক প্রিয়তোষ নাথ বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবগুলো ব্যাচের সকল প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন।