‘চট্টগ্রামকে বাসযোগ্য-নান্দনিক শহরে রুপান্তরিত করতে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড বিএনপির দুর্গ। প্রতিটি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে চট্টগ্রামের অন্য ওয়ার্ড থেকে এই ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থীরা আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের চেয়ে অনেক বেশী ভোটে এগিয়ে থাকে। এই ওয়ার্ডে যেসকল বিএপির নেতাকর্মী আছেন তারা সবাই জাতীয়তাবাদী আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে এই এলাকায় বাড়াইপাড়া খালের প্রকল্প চলমান রয়েছে। এটার উপর নির্ভর করছে এই এলাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা। বাড়াইপাড়া খালে যদি কোন গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনা থাকে আপনারা আমাকে জানাবেন। আপনারা কাজের তদারকি করবেন। কাজ আমি বুঝে নিব যদি কোন গাফিলতি না থাকে। বাড়াইপাড়া খালটি হলে এই এলাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। এই ওয়ার্ডের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে আমাদের তালিকা দিবেন আমরা দ্রুততার সাথে সমাধান করবো।

চট্টগ্রামকে একটি নান্দনিক শহরে রুপান্তরিত করতে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এইগুলো যদি বাস্তবায়িত হয় চট্টগ্রামকে আপনারা অন্যরুপে দেখতে পারবেন। আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি খেলার মাঠ, খালের পাড়ের সৌন্দর্য্য বাড়াতে ওয়াকওয়ে ও সবুজ বনায়নের প্রজেক্টগুলো দেওয়ার চেষ্টা করছি। অতি শীঘ্রই প্রত্যেকটি ওয়ার্র্ডে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে পারবেন। আমরা ঘোষণা দিয়েছি আগ্রাবাদ জাম্বুরী ফিল্ডের মাঠটিকে শিশুপার্ক থেকে আলাদা করে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিব। আমাদের আরেকটি পরিকল্পনা হচ্ছে বাকলিয়ায় যে বাকলিয়া স্টেডিয়ামটি আছে সেটিকে দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়ামে উপহার দিব। বাকলিয়া সরকারি বিদ্যালয়ের মাঠটিকেও অনতিবিলম্বে সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এইভাবে ৪১ ওয়ার্ডে আমি ৪১টি খেলার মাঠ উপহার দিব। আপনারা শুধু আমাকে একটি খালি জায়গা দেখানোর চেষ্টা করেন যাতে আমি একটি পার্ক ও খেলার মাঠ করতে পারি। শিশু কিশোরদের যদি খেলার মাঠে ফেরাতে পারি তাহলে মাদক সমস্যা, কিশোর গ্যাং সহ সামাজিক ব্যাধিগুলো কমে আসবে। ৯-১৪ বছরের মেয়েদের জন্য সিটি কর্পোরেশন এর পক্ষ থেকে আমরা ইতিমধ্যে বিনামূল্যে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এর টিকা প্রদানের ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ভ্যাকসিন মেয়েদের জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। বিনামূল্যে নগরীর মেমন হাসপাতাল-২ এ ডেঙ্গু নির্ণয়ের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। তাই এই নাগরিক সুবিধাগুলো সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে হবে।

তিনি আরোও বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে সচিব আছেন, পরিচ্ছন্ন কর্মী আছেন, সুপারভাইজার আছেন। তারা সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা আপনারা তদারকি করবেন। এলাকায় মশার স্প্রে মারছে কিনা, নালা-নর্দমা পরিষ্কার করছে কিনা, রাস্তাঘাটগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার করছে কিনা তা দেখবেন। কোথাও সমস্যা থাকলে আমাদের অভিযোগ করবেন আমি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিব। আমরা লক্ষ্য করছি বিভিন্ন এলাকায় বিল্ডিং থেকে ময়লা আবর্জনা সরাসরি খালে ফেলা হচ্ছে। খালে সরাসরি ময়লা ফেললে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কোন কাজে আসবে না। জলাবদ্ধতার সমস্যাও দূর হবেনা। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে অপচনশীল পলিথিন এর ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। কাঁচের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এই শহরটা শুধু আমার একার না। চট্টগ্রামকে একটি বাসযোগ্য, নান্দনিক শহরে রুপান্তরিত করতে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন। সবাইকে নিয়ে আমরা একটি সুন্দর,পরিচ্ছন্ন ক্লিন সিটি, গ্রীন সিটি ও হেলদি সিটি উপহার দিব।

তিনি আরোও বলেন, অনেক বছর ধরে দলের দু:সময়ে আপনাদের আমি সাথে কাজ করেছি। দীর্ঘ ১৬বছর আপনারা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখনো বিএনপি ক্ষমতায় আসেনি একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। আল্লাহর অসীম রহমত, আপনাদের দোয়া ও কষ্টের ফলে আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। এটা একটা শান্তনা সারা বাংলাদেশে শুধু একজন বিএনপির মেয়র আছে তা শুধু চট্টগ্রামে। আমি মনে করি আমাদের কাঙ্খিত বিজয় সেদিন হবে যেদিন বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। সেটার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। যেভাবে দেশনায়ক তারেক রহমান যেভাবে সাংগঠনিক শক্তি মজবুত করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেভাবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার জন্য বিনা কারণে জেল খেটেছেন। তাই আপনারা আরেকটু ধৈর্য্য ধরুন। জনগণের পিছনের দরজা দিয়ে নয়, জনগণের প্রতক্ষ্য ভোটে বিএনপি আবারো ক্ষমতায় আসবে।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, আওয়ামীলীগ যেভাবে ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বার, মসজিদ কমিটি, স্কুল কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করেছিল,ঠিক সেই ধরনের একটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ডা. শাহাদাত হোসেন এর নিশ্চিত বিজয়কে ছিনিয়ে নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে একজন মেয়র বসানো হয়েছিল। ঐ অবৈধ মেয়রকে আখের ঘোচানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সে আখের ঘুচিয়ে পালিয়ে গেছে। ৪১টি ওয়ার্ডে ৪১জন সন্ত্রাসীকে কাউন্সিলর বানিয়ে জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যারা সিটি কর্পোরেশন কে আওয়ামীলীগ এর দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছিল। ভাগ বাটোয়ারার কার্যালয়ে পরিণত করেছিল। আওয়ামীলীগ পক্ষে কোন ভালো মানুষ নির্বাচিত হতে পারেনি। কেউ নির্বাচনে দাঁড়ালেও আরেকজন সন্ত্রাসী তাঁকে বসিয়ে দিয়ে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দূষণ মুক্ত হয়েছে। এখন চট্টগ্রামবাসির আশা,প্রত্যাশা, ডা শাহাদাত হোসেন একজন পরিচ্ছন্ন ও সৎ মানুষ তিনি মানুষের কাঙ্খিত উন্নয়নে কাজ করবেন। আমরাও যেন সিটি কর্পোরেশনকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত না করি। সিটি কর্পোরেশন এর যাতে সোর্স অব ইনকাম বাড়ে সেজন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আলহাজ্ব আবু সুফিয়ান বলেন,যারা ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জনগণের রায় ছিনিয়ে নিয়ে অবৈধভাবে মেয়র হয়েছিল, কাউন্সিলর হয়েছিল তারা এখন জনরোষে কোথায় যে হারিয়ে গেছে, পালিয়ে গেছে খবর নেই। প্রথমে তারা জনগণের রায় ছিনিয়ে নিয়ে জোর করে মেয়র ও কাউন্সিলর হয়েছে। তারপর দায়িত্ব নিয়ে জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করে নিজেরা অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। চট্টগ্রামের জন্য, চট্টগ্রামের মানুষের জন্য ,এলাকার উন্নয়নে তারা কিছুই করেনি। আমরা বাংলাদেশে আর আওয়ামীলীগ এর অপরাজনীতিতে ফিরে যেতে চাইনা। যে অপকর্ম আওয়ামীলীগ করেছে তা আর বাংলাদেশে করতে দেওয়া হবেনা। আমরা চাই দেশে সঠিক গণতন্ত্রের চর্চা হোক, মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পাক, তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাক। মানুষ তাদের নেতা নির্বাচন করার স্বাধীনতা অর্জন করুক। আওয়ামীলীগ যে অন্যায় করেছে তার ফলাফল তারা ভোগ করছে। তাদের এই পরিনাম অবশ্যম্ভাবী ছিল। তাই এখন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বেশী ভূমিকা পালন করতে হবে। নেতাকর্মীদের দেখে মানুষ যেন আতঙ্কিত না হয় সেভাবে চলাফেরা করতে হবে। জনগণের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে,আস্থা অর্জন করতে হবে। কারণ আমাদের বিগত ১৬বছরের গৌরবান্বিত লড়াই-সংগ্রাম ছিল জনগণের জন্য। আমাদের রাজনীতিই হলো জনকল্যানের জন্য। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। জনগণ বিএনপির সাথে ছিল। জনগণের মেন্ডেট নিয়েই বিএনপি সরকার গঠন করবে।

১১ ডিসেম্বর (বুধবার) সন্ধ্যায় বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকার নুর হাউজিং সোসাইটির সম্মুখে ৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড বিএনপি,অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এর উদ্যোগে এলাকার সমস্যা সমাধানে নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর সাথে আয়োজিত “মতবিনিময় সভায়” প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাজী ইলিয়াছ শেকু’র সভাপতিত্বে এবং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাসান লিটন এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন লিপু, সাবেক সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম, সাবেক মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক মো. বকতেয়ার, সাবেক সহ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আজিজ।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য নুরুল আলম, মঞ্জুর আলম মঞ্জু, চান্দগাঁও থানা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন ভুইয়া, আফিল উদ্দিন আহমেদ, মসিহউদ্দৌলা জাহাঙ্গীর, নাছির উদ্দিন, হাজী আইয়ুব, মো. হারুন সও, মহানগর যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ম. হামিদ, চান্দগাঁও থানা যুবদলের সাবেক আহবায়ক গোলজার হোসেন, শাহনেওয়াজ চৌং মিনু, আকতার হোসেন, শওকত আলী, এম. আবু বক্কর রাজু, মাহবুবুল আলম, নুরনবী, সাইদুল ইসলাম, মনছুর আলম, সাজিদ হাসান রনি, মনছুর আলম, ইসকান্দর হোসেন, জামাল উদ্দিন, আব্দুল নবী। এসময় উপস্থিত ছিলেন ফজল আজিম মাসুম, হাজী সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল মতিন কোং, মো. হোসেন মাসুম, শিরিন জাহান, যুবদল নেতা আলমগীর টিটু, সিরাজুল ইসলাম ইকবাল, শফিউল্লাহ মামুন, বেলাল আমিন, মিজানুর রহমান সুমন, মিনহাজ উদ্দিন সোহেল, মো. শাহালম, জসিম উদ্দিন, আব্দুর রশিদ, কাউসার হোসেন কায়ছার, আব্দুল আজিজ, সাইদুল ইসলাম ইমন, মো. সরোয়ার, মো. মুরাদ, জসিম উদ্দিন, সাঈদ ইসলাম বাপ্পি, সাদ্দাম হোসেন, মো. খোরশেদ, আব্দুল মান্নান, মো. কায়ছার, মো. ইসকান্দর, মো. রহিম, রাজু মিয়া, মো. ইউসুফ, রাজু হাসান, মো.সাইফু, পারভেজ আলম, মোক্তার হোসেন, মো. রাশেদ, সাফায়েত হোসেন সোহান প্রমুখ।