লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, ছাত্র-জনতার চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারী, টাকা পাচার, টাকা লুণ্ঠনকারী এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় হয়েছে। এ অসীম আত্মত্যাগকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারি না।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের সকল কর্মকাণ্ডগুলো স্বচ্ছতা ও সততার সাথে দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন না হলে, সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। অনেকগুলো নিয়োগ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। হুজুগের মাথায় লোক দেখানো কাজ করলে হবে না। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে অধিকতর সতর্কতার সাথে মনোনয়ন বা নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও উপদেষ্টা এবং নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অতীত ইতিহাস জানা না থাকলে বা রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব থাকলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে অথর্ব, অকর্মন্য, ধীরগতির ব্যক্তিদের দিয়ে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে না। ছাত্র-জনতার রক্ত বৃথা যাবে।
আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর মগবাজারে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
কর্নেল অলি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে বৈঠকে মোট ৮৩টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করি, যা আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নয়, বরং দেশের সার্বিক মঙ্গলের জন্য। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সংস্কার বাস্তবায়নের গতি হতাশাব্যঞ্জক।
তিনি বলেন, একজন উপদেষ্টা বলেছেন যে জাতীয় সংগীত একটি বিতর্কিত বিষয়, সুতরাং এটি পরিবর্তন করা যাবে না। তার জানা উচিত, জনগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করে সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব। গণভবন কারো বাপের ভবন না, বরং জাতীয় প্রতিষ্ঠান। মিউজিয়াম করা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে প্রশ্ন হল গণভবনে কেন? অন্য জায়গায় নয় কেন? জাতীয় প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার আইনগত ভিত্তি এখন কোথা থেকে পেলেন? ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর অন্য কিছুই অধিকতর গুরুত্ব পেতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, আন্দোলনকারী আমাদের ছেলেমেয়েদের বা জনতার সরলতাকে পুঁজি করে, কোনো অন্যায় পদক্ষেপ নেয়াও ঠিক হবে না। এদেশে একনায়কত্ব স্বৈরাশাসন কায়েমকারী, গণহত্যাকারী, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী, টাকা লুণ্ঠনকারী, চাঁদাবাজ এবং জঙ্গীবাদের কোনো স্থান নাই। এই দেশ এখন কারো বাপের সম্পত্তি না। যত দ্রুত সম্ভব আইন শৃঙ্খলার উন্নতি সাধন করতে হবে। আমরা জানি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি খুবই কঠিন কাজ। তবে পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর করতে হবে, তা না হলে গণহত্যাকারীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
কর্নেল অলি বলেন, আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ, সমস্যার অন্ত নেই। এ চ্যালেঞ্জগুলো দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করে, জনগণকে স্বস্তি দিতে হবে, তা না হলে আমাদের আরো কঠিন মূল্য দিতে হতে পারে।
তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। অসংখ্য আহত ছাত্র-জনতা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। এরই মধ্যে বন্যায় কয়েকটি জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বার বার ভাটির দেশ হিসেবে আমরা উজানের দেশের বৈরিতার স্বীকার হচ্ছি।
‘শেখ হাসিনার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ও লোটা-বহনকারী অনেক ব্যক্তি এখনো প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের ব্যাপারে জরুরিভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গুম, খুন, দুর্নীতি, টাকা পাচারকারী, গণতন্ত্র হত্যাকারী এবং চাঁদাবাজদের সকলকে আইনের আওতায় এনে যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীদের চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করা খুবই জরুরি। সর্বোপরি, দুর্নীতিবাজ একজন ব্যক্তি এখনো পর্যন্ত দেশের ১ নম্বর আসনে বসে আছে। এটার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নাই। সংবিধানের দোহাই দিয়ে, যারা তাকে এই আসনে বসিয়ে রেখেছে, তারা পক্ষান্তরে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন করছে না।’
কর্নেল অলি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বার্থে, দেশকে ভারতের কাছে নতজানু করে ফেলেছে। আমরা ইচ্ছা করলেও প্রতিবেশী বদলাতে পারব না। সুতরাং উভয় দেশের সুসম্পর্কের স্বার্থে অনতিবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে। আমাদের আত্মসম্মান ও মর্যাদা নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে যৌথ নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও ভারত মনে করে, তারা আমাদের তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। তাদের আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আমরাই বরং তাদের তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছি।
‘বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নাই। মেজরিটি বা মাইনরিটি বলতে কিছুই নেই। সকলে বাংলাদেশের নাগরিক এবং সকলের সমান অধিকার। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, আমাদের সততা, ন্যায় এবং নিষ্ঠার সাথে প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে, ঈমান মজবুত করতে হবে। আমরা অন্য কোনো দেশের ক্ষতি কামনা করি না। অনুরূপভাবে আমরা চাই, কেউ যেন আমাদের দেশের ব্যাপারে নাক না গলায়, বরং আমরা সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আমাদের সহায় হবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, খাইরুল কবির পাঠান ও হামিদুর রহমান খান প্রমুখ।