ফিরোজ মাহবুব কামাল: মুসলিম হওয়ার অর্থ হলো, প্রতি মুহুর্ত বাঁচতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুমের আনুগত্য নিয়ে এবং বাঁচতে হয় যে কোন হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ থেকে। অর্থাৎ সমগ্র জীবনে পথ চলতে হয় সিরাতাল মুস্তাকীম বেয়ে এবং বাঁচতে হয় বিচ্যুতি থেকে। অর্থাৎ দ্বীনের মাঝে পূর্ণ ভাবে প্রবেশ করতে হয়। সে হুকুমটি মহান রব’য়ের। পবিত্র কুর’আনে প্রদত্ত সে নির্দেশটি হলো, “উদখুলু ফিস সিলমে কা’ফফা।” অর্থ: প্রবেশ করো ইসলামে পূর্ণ ভাবে। এরূপ ধর্ম পালনকেই ইংরাজীতে বলা হয় consistency তথা ধর্মের পথে অনড় অবস্থান। এটিই হলো মহান নবীজী (সা:)’র সূন্নত। তিনি মেনে চলেছেন তাঁর রব’য়ের প্রতিটি হুকুমকে। কোন একটি হুকুমকে তিনি অমান্য করেছেন তার কোন নজির নাই। অথচ ইবলিস এখানে ভূল করেছিল। ইবলিস দ্বীন পালনে অনড় থাকতে পারেনি। বেছে নেয় inconsistency তথা বিচ্যুতির পথ। সে সারা জীবন ইবাদত করে হযরত আদম (আ:)কে সিজদার হুকুমটি অমান্য করে বসে। সে অবাধ্যতার জন্য অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়।
অতি পরিতাপের বিষয় হলো শয়তানের সে সূন্নত নিয়ে বাঁচছে আধুনিক যুগের অধিকাংশ মুসলিম। তারা নিয়মিত নামাজ-রোজা পালন করে -এমন কি দ্বীনের তাবলিগও করে, কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়ত আইনের প্রতিষ্ঠার জিহাদে তারা নামে না। নবীজী (সা:) যেরূপ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দিলেন এবং ১০টি বছর সে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান রূপে দায়িত্ব পালন করলেন -সেরূপ একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা নিয়ে তারা ভাবে না। অনেকে জিহাদের কথা তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে, কিন্তু বড় বড় মুসলিম দেশগুলির বিভক্তি নিয়ে তাদের মনে কোন দুঃখ হয়না। উসমানিয়া খেলাফত ভেঙ্গে গেল, আরব ভূমি ২২ টুকরোয় খণ্ডিত হলো, পাকিস্তান দুই টুকরায় ভেঙ্গে গলে -মুসলিম দেশাগুলির এরূপ ভেঙ্গে যাওয়াতে তাদের মন আদৌ ব্যথিত হয় না। বরং বৃহৎ মুসলিম দেশ ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের নির্মাণ নিয়ে তারা উৎসব পালন করে। ভাঙ্গার দিনগুলিকে তারা বিজয় দিবস বসে। সে উৎসব পালনে তাদেরকে একত্রে দেখা যায় সেক্যুলারিস্ট জাতীয়তাবাদীদের সাথে।
মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের ভূ-রাজনৈতিক একতাকে ফরজ করেছেন এবং বিভক্তিকে হারাম করেছেন। কারণ, একতাই বিজয় ও স্বাধীনতার পথ; এবং বিভক্তি পরাজয় ও পরাধীনতার পথ। মহান রব’য়ের সে হুকুম মানতে দেখা গেছে গৌরব যুগের মুসলিমদের। তাই সেকালে আরব, ইরানী, তুর্কী, কুর্দি, হাবসী, মুর -এরূপ নানা ভাষা ও নানা বর্ণের মুসলিমদের একত্রে অখণ্ড মানচিত্রে বসবাস করতে দেখা গেছে। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার সে বিধান মানতে আজকের মুসলিমগণ রাজী নয়। আরব বিশ্বে কোটি কোটি নামাজী; কিন্তু ক’জনের মধ্যে আরব ভূমি ২২ টুকরোয় বিভক্তি নিয়ে দুঃখবোধ আছে? ক’জন সে বিভক্তির দেয়াল ভেঙ্গে অখণ্ড রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়? বরং সে নামাজী ও রোজাদারদের দেখা যায় রাজতন্ত্রী, সেক্যুলারিস্ট ও গোত্রবাদীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিভক্তির দিনগুলিকে স্বাধীনতার দিবস রূপে উৎসব করতে।
একই রোগে আক্রান্ত কোটি কোটি বাঙালি মুসলিম। তারা নামাজ-রোজা পালন করে; পবিত্র কুর’আনও তেলাওয়াত করে। কিন্তু পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টি নিয়ে তাদের প্রচুর আনন্দ ও উৎসব। এটিকে তারা বিশাল বিজয় মনে করে। অর্থাৎ তাদের উৎসব মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি নিয়ে, একতা নিয়ে নয়। এর কারণ একটিই। তা হলো, তারা বাঁচছে শয়তানের সূন্নত নিয়ে। তাদের ধর্মপালনোর মধ্যে কোন consistency নাই। তারা শয়তানের মতই মহান আল্লাহতায়ালার কিছু হুকুমকে মান্য করে এবং কিছু হুকুমকে অমান্য করে। ইসলাম পালনে এরূপ inconsistencyই হলো আজকের মুসলিমদের প্রধান রোগ। পরিতাপের বিষয় হলো, এ রোগ নিয়ে মোল্লা-মৌলভী ও আলেম-আল্লামাদের মাঝেও কোন আলোচনা নাই। কারণ তারাও একই রোগের শিকার।