বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ ছাড়ার প্রস্তুতিতে দুশ্চিন্তায় মালয়েশিয়ার সবজি চাষীরা

বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ ছাড়ার প্রস্তুতিতে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মালয়েশিয়ার সবজি চাষীদের। প্রজাপতির পর্বত খ্যাত মালয়েশিয়ার ক্যামেরন হাইল্যান্ডের সবজি খামারিরা বলছেন, আগামী কয়েক মাসে বিদেশি শ্রমিকদের অপ্রত্যাশিত ঘাটতির কারণে শিগগিরই তাদের উৎপাদন কমিয়ে আনতে হবে।

মালয়েশিয়ার স্বনামধন্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউ স্ট্রেইটস টাইমস (এনএসটি) জানিয়েছে, ক্যামেরন হাইল্যান্ড মালয় ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দাতুক সৈয়দ আবদুল রহমান বলেছেন, সরকারের ৩১ মার্চের মধ্যে ঝুলে থাকা বিদেশি শ্রমিকদের কোটা বাতিল করার পদক্ষেপে আমরা হাই এন্ড ড্রাইয়ের মতো অবস্থায় আছি। এখন এটা অনুভব না করলেও সম্ভবত এই বছরের মে বা জুন থেকে এর বড় একটি প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতিতে।

জানা গেছে, সামনের মাসে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার বেশিরভাগ শ্রমিক ঈদের জন্য তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ ১০ বছর ধরে খামারে কাজ করেছে যাদের অধিকাংশের ওয়ার্ক পারমিট আর রিনিউ হবে না। আবার এদের মধ্যে যাদের বৈধ পারমিট আছে তারা এখনও ১০ বছর কাজ করতে পারবেন, কিন্তু ঈদের পরে মালয়েশিয়ায় তারা কাজ না করতে, ফিরে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা খুবই হতাশাজনক।

প্রতিবেদনটি বলছে, ক্যামেরন হাইল্যান্ড প্রতিদিন ১০০০ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন করে দেশটির পাইকারি বাজারের জন্য, কিন্তু শ্রমিকের ঘাটতি এ উৎপাদনকেও প্রভাবিত করবে।

নিউ স্ট্রেইটস টাইমস গত ১৩ মার্চ যখন খামারিদের সাথে যোগাযোগ করে সে সময় তারা বলেছিলেন, এই কর্মীর অভাব খামার অপারেটরদের তাদের উৎপাদন কমাবে এবং খুব সামান্য জমি তাদের চাষ করতে বাধ্য হতে হবে। তারা আরো জানাচ্ছিলেন, যদি একজন খামারির ১.৬ হেক্টর জমি থাকে তবে তিনি লস থেকে রক্ষা পেতে কেবল ০.৮ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করবেন।

ফেডারেশন অফ ভেজিটেবল ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ মালয়েশিয়ার চেয়ারম্যান লিম সের কুই সেদিন বলেছেন, ঝুলে থাকা বিদেশি শ্রমিক কোটা বাতিলের ফলে জনশক্তির ঘাটতিতো হবেই এবং সবজি সরবরাহ কমার কারণে বাজারে সবজির দাম বাড়বে।

এদিকে, সৈয়দ আব্দুল রহমান বলেন, বিদেশি শ্রমিকের অভাব এবং পরবর্তী উৎপাদনে হ্রাস সরকারকে দাম স্থিতিশীল করতে বাইরে থেকে সবজি আমদানি করতে হতে পারে।

তিনি আরো বলছিলেন, আমি এতটাই উদ্বিগ্ন যে, খামারিরা সবজি উৎপাদন কমিয়ে আনবে। কারণ তাদের খামার পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক নেই! তারা যথারীতি চাষ না করতে পেরে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে দেশকে সবজি আমদানি করতে হবে। সেসময় নিউ স্ট্রেইটস টাইমসকে তিনি আরো বলেন, ক্যামেরন হাইল্যান্ডসে প্রায় ৬০০০ জন ভাড়া করা বিদেশি শ্রমিক ছিল।

সৈয়দ আব্দুল রহমান কর্মীর অভাব রোধে দেশটির সবজি অ্যাসোসিয়েশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি জমা দিয়েছে যার কপি পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয়েছে। তাতে বিদেশি শ্রমিকদের আনার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে, ক্যামেরন হাইল্যান্ডের স্থানীয় চাইনিজ কৃষক চে ই মং বলেছেন যে, বিদেশি শ্রমিকদের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত বেশ হতাশাজনক। কারণ বর্ষার পরে ‘ব্যবসা’ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করেছে আর এরই মধ্যে পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকলে আমরা কীভাবে এ খামারগুলি পরিচালনা করবো?

তিনি আরো বলেছিলেন, এই মুহূর্তে বিদেশি শ্রমিকদের ঘাটতি না থাকলেও ঈদের জন্য দেশে গেলে কেউ কেউ মালয়েশিয়ায় আর ফিরে না আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এদিকে গত 8 মার্চ, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক শ্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল বলেন, ৩১ মে পর্যন্ত শ্রমিক পুনর্গঠন কর্মসূচি ২.০ এর মাধ্যমে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।