কাঁচা মাংস খান, চার পায়ে হাঁটেন এই ইউক্রেনীয় নারী

ওক্সানা মালায়া। ইউক্রেনের এই নারী আর পাঁচজনের থেকে অনেকটাই আলাদা। তিন বছর বয়সে তার বাবা-মা তাকে ঠাণ্ডায় বাড়ির বাইরে রেখে দিত। সেই থেকে রাস্তার কুকুরদের মধ্যেই তিনি লালিত -পালিত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকতে থাকতে মানব অভ্যাস থেকেই আজ অনেকটাই দূরে ওক্সানা মালায়া। আজ তিনি কুকুরের মতো ডাকেন, কুকুরের মতো চারপায়ে হাঁটেন, কুকুরের মতোই নিজের গা চেটে-চেটে পরিষ্কার করেন, কাঁচা মাংস খান, আবর্জনা থেকেই খাবার খুঁটে খান!

আমরা ছোটবেলায় অনেকেই টারজান এবং মোগলির মতো গল্পে মুগ্ধ হয়েছি , এমন শিশুরা বন্য প্রাণীদের সাথে বসবাস করার জন্য তাদের মানব বাসস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল এবং এই গল্পগুলির সাধারণত একটি সুখী পরিণতি হয়। কিন্তু এই ধরনের ঘটনাগুলির বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। যেমনটা ঘটেছে ওক্সানা মালায়ার ক্ষেত্রে । ৬০ মিনিট অস্ট্রেলিয়ার সাথে একটি সাক্ষাত্কারে মালায়া জানিয়েছেন, মাত্র ৩ বছর বয়সে তার নেশাখোর বাবা-মা এক প্রচণ্ড ঠান্ডার রাতে তাকে ঘরের বাইরে বের করে দেন। ওই প্রবল ঠাণ্ডায় একটু উষ্ণতার খোঁজে সে কোনও রকমে হামাগুড়ি দিয়ে তাদের পোষা কুকুর নাইদার ঘরে (কেনেলে) গিয়ে ঢুকে পড়ে।

‘মায়ের অনেক সন্তান ছিল…আমাদের পর্যাপ্ত বিছানা ছিল না,’ গত নভেম্বরে ৪০ বছর বয়সী মালায়ার ইউক্রেনের নোভা ব্লাহোভিশচেঙ্কার গ্রামে তার অপমানজনক শৈশব সম্পর্কে বলতে বলতে চোখে পানি চলে এসেছিলো।
এই ভাবে সে কুকুরের ঘরে কাটায় ৩ থেকে ৯ বছর! মালায়ার যখন ৯ বছর বয়স তখন তার বিষয়টা ইউক্রেন সরকারের নজরে পড়ে। তাকে তখন কুকুরদের আড্ডা থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে গেলে কুকুরেরা দল বেঁধে বাধা দেয় তাদের। যাই হোক, পরে সেখান থেকে তাকে কোনওক্রমে উদ্ধার করে এনে ফস্টার হোমে রাখা হয়। তার ক্যানাইন-লাইক বিহেভিয়ারাল প্যাটার্ন বদলানোর চেষ্টা করা হয়। অনেকটা শুধরে গেলেও এখনও কুকুরের অনেক কিছুই তার মধ্যে রয়ে গিয়েছে।

শিশু মনোবিজ্ঞানী লিন ফ্রাই মালায়া সম্পর্কে বলেছেন, ”আমি মনে করি না যে সে কখনও পড়তে বা অন্য কিছু করতে সক্ষম হবে। আপনি যদি প্রায় ৫ বছর ভাষার সংস্পর্শে না থাকেন তাহলে সম্ভবত আপনি নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলবেন। ”

২০০৬ সালে, মালায়া তার পরিবারের সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিল কিন্তু তার এতো বছরের ট্রমা নিরাময়ের জন্য এটি যথেষ্ট ছিল না।তিনি ৬০মিনিট অস্ট্রেলিয়াকে বলেছেন, “যখন আমি একাকী বোধ করি, তখন আমি হামাগুড়ি দিয়ে যাই। এভাবেই আমি একাকীত্ব কাটাই। ”