মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই (রাঙামাটি)। সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অধীনে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন কিশোর- কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ন্যায় কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে বিগত ২০১৯ সাল থেকে ৫টি কিশোর কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এই ক্লাবে সপ্তাহে ২ দিন বিনা মূল্যে কন্ঠ সঙ্গীত ও আবৃত্তি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া জেন্ডার প্রমোটরদের মাধ্যমে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে কিশোর- কিশোরীদের ক্ষমতায়নে বাল্য বিবাহ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতন করা হচ্ছে। প্রতিটি ক্লাবে মহিলা বিষয়ক কার্যালয় কর্তৃক নিয়োগকৃত ১ জন সঙ্গীত শিক্ষক, ১ জন আবৃত্তি শিক্ষক এবং ১ জন জেন্ডার প্রমোটর এই প্রশিক্ষণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া এই প্রকল্পের অধীনে কিশোর-কিশোরীদের কারাতে প্রশিক্ষণের জন্য কাপ্তাইয়ে সম্প্রতি একজন কারাতে প্রশিক্ষকও যোগদান করেছেন। প্রতিটি ক্লাবে ১১ থেকে ১৮ বছরের ২০ জন কিশোরী ও ১০ জন কিশোর এই প্রশিক্ষণ গ্রহন করে থাকেন। ইতিমধ্যে এই কেন্দ্রগুলো থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে অনেক কিশোর-কিশোরী গান এবং আবৃত্তিতে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সফলতা অর্জন করেছে। এক কথায় তৃনমুল পর্যায়ে সাংস্কৃতিক বিকাশে কিশোর-কিশোরী ক্লাব গুলো অন্যন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। নারানগিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিশোর-কিশোরী ক্লাবে গানের শিক্ষার্থী অন্বেষা সেন এম্পি বলেন, আমি বিনামূল্যে এই ক্লাব হতে গান শিখে আসছি। এখানে বিনামূল্যে গান শেখার পাশাপাশি সপ্তাহে ২দিন পুষ্টিকর নাস্তা দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে আমি জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা, শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতা এবং কাপ্তাই সঙ্গীত আইডল ২০২৩ এ অংশ গ্রহন করে উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে অনেক পুরস্কার অর্জন করেছি। ওয়াগ্গা উচ্চ বিদ্যালয় কিশোর- কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থী সুমেধা তনচংগ্যা, অনুপ তনচংগ্যা এবং চিৎমরম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কিশোর- কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থী ছাইন ছাইন নু মারমা বলেন, সপ্তাহে বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার আমরা এই কিশোর-কিশোরী ক্লাবে বিনামূল্যে গান ও আবৃত্তি শিখছি এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করছি। ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ওয়াগ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের গানের শিক্ষক জ্যাকলিন তনচংগ্যা বলেন, সপ্তাহে বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার ২দিন এই ক্লাবে ২ ঘন্টা করে ক্লাস নেওয়া হয়। বিভিন্ন কিশোর- কিশোরী ক্লাবের অনেক শিক্ষার্থী গান এবং আবৃত্তি শিখে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করে পুরস্কার অর্জন করেছে। চিৎমরম ইউনিয়নের চিৎমরম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের আবৃত্তি শিক্ষক পুর্নতা বড়ুয়া এবং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাপছড়ি ওয়াগ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের আবৃত্তি শিক্ষক তসলিমা জাহান জাফরিন বলেন, মূলত সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং দরিদ্র পরিবারের কিশোর-কিশোরীরা এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে থাকে। অনেকে এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে সফলতা অর্জন করেছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রিনি চাকমা বলেন, কিশোর-কিশোরীদের ক্ষমতায়নের জন্য এটি সরকারের একটি ভালো পদক্ষেপ। অধিদপ্তর কর্তৃক নির্দেশনা অনুসারে কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৫টি কিশোর-কিশোরী ক্লাবে এই কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি বিনামূল্যে গান, আবৃত্তি ও কারাতে শিখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া নারী ও পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণ এবং সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে চেইন্জ এজেন্ট হিসাবে তারা ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি মনে করি।