প্রয়োজনীয় জ্বালানি পাবে বাংলাদেশ

    বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় জ্বালানি দেয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি।
    স্থানীয় সময় বুধবার (২৪ মে) দুপুরে কাতারের ‘আমির-ই-দেওয়ানে’ আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন দোহা সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    বৈঠকে কাতারের আমির বলেন, বাংলাদেশে অধিকতর জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে নতুন একটি চুক্তির আলোচনা চলছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন বন্ধু দেশ হিসেবে কাতার বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। বৈঠকে জ্বালানি, বিনিয়োগ, কাতারে বাংলাদেশি জনশক্তি, মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন সমস্যা, উন্নয়ন এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

    বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, খুবই উষ্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে সম্পন্ন হওয়া এই বৈঠকটি সফল হয়েছে।

    বৈঠকে জ্বালানি বিষয়ে কাতারের আমির বলেন, বাংলাদেশে অধিকতর জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে নতুন একটি চুক্তির আলোচনা চলছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন বন্ধু দেশ হিসেবে কাতার বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

    ড. মোমেন বলেন, কাতারের আমিরের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। শিগগিরই যে কোনো সময় নতুন এই চুক্তিটি (বাংলাদেশ-কাতার) সই হতে পারে।

    ২০১৭ সালের ১৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তির আওতায় বর্তমানে কাতার থেকে ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন জ্বালানি আমদানি করছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ আরও বেশি পরিমাণে এলএনজি প্রত্যাশা করছে।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে কাতারের আমির বলেন, তারা এক সময় জানতো বাংলাদেশ দুর্যোগ এবং দারিদ্র্যপীড়িত দেশ। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তিনি বাংলাদেশের খাদ্য সংকট দূর করেছেন।

    এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছরে তার সরকার দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়া। বর্তমান সরকার বেশ কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভ করেছে। কিন্তু আমার কাজ শেষ হয়নি। আমি আরও কাজ করতে চাই। কিন্তু আমি একা পারব না। আমার আপনার (কাতারের আমিরের) সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের আরও বিনিয়োগ প্র্রয়োজন।

    বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ উন্মুক্ত উল্লেখ করে পারস্পরিক লাভে কাতারকে বড় বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

    কাতারের আমিরকে এ বছর বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জবাবে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেন, অবশ্যই তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন।

    মুসলিম উম্মাহ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে মুসলিম দেশগুলো ছোটখাট বিষয়ে সংঘাতে জড়ায়, এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের পথে বাধা। শেখ হাসিনা বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য কাজ করতে কাতারের আমিরকে অনুরোধ করেন।

    জবাবে কাতারের আমির বলেন, তিনি হয়তো মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন না। তবে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং অগ্রগতির জন্য তিনি কাজ করে যাবেন।

    প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিষয়ে কাতারের আমির বলেন, বর্তমানে কাতারে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার জনশক্তি আছে, তারা কাতারের জন্য আশীর্বাদ। কাতার নতুন নতুন প্রকল্প নিতে যাচ্ছে যেখানে বাংলাদেশিরা কাজ করতে পারবেন।

    পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতার ফাউন্ডেশনের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্কুল ‘আওসাজ একাডেমি’ পরিদর্শন করেন। এ স্কুলটিতে ৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী ৫০০ শিক্ষার্থী এবং ১৮৫ শিক্ষক আছেন।

    শেখ হাসিনা এই একাডেমির কয়েকটি ক্লাসরুম পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি উপহার দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশের অটিস্টিক শিশুদের আঁকা ৪টি ছবি উপহার দেন।

    বাংলাদেশে এ ধরনের স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং শুরুতে শিশুদের অটিজম শনাক্ত করা এবং বাংলাদেশি অটিজম স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে কাতারের কাছ থেকে সহায়তা চান। এই স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং কাতার ফাউন্ডেশন এ ধরনের সহায়তা দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন।