রাষ্ট্রদূতের শাহীনবাগে যাওয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের শামিল: রাশিয়া

ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শাহীনবাগে যাওয়াকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের চেষ্টা মনে করে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা মস্কোর গত ২২ শে ডিসেম্বরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করেন। রুশ ভাষার ওই ব্রিফিংয়ের ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্ট রোববার ঢাকার গণমাধ্যমে সরবরাহ করে রুশ দূতাবাস। অবশ্য বিবৃতিটি রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও রয়েছে। শাহীনবাগে বিরোধী দলের নেতার স্বজনদের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের বিরোধিতাকারী রাষ্ট্রদূতকে ঘিরে ধরার যে চেষ্টা করেছেন তা ‘প্রত্যাশিত’ বলে অভিহিত করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষার কথা বলে ক্রমাগত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

“বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা” উপ-শিরোনামে প্রচারিত ব্রিফিংয়ের ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্টে বলা হয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বহুল প্রচারিত ঘটনাটি রাশিয়া নোটে নিয়েছে। মূখপাত্র বলেন, সেখানো স্থানীয় একটি সংগঠনের বাধার মুখে পড়েছিলেন রাষ্ট্রদুত, যা তার জন্য নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছিল। ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রাজনৈতিক দলের ওই সমর্থকের পরিবারের সঙ্গে রাষ্ট্রদুতের সাক্ষাতের বিরোধিতায় সেখানে জড়ো হয়েছিলেন ওই সংগঠনের কর্মীরা। রাশিয়া মনে করে ঘটনাটি আমেরিকান কূটনীতিকের তৎপরতার একটি প্রত্যাশিত ফলাফল। বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারের প্রতি যত্নবান হওয়ার অজুহাতে ক্রমাগতভাবে এ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে এমন অভিযোগ করে রুশ মূখপাত্র বলেন, আর এ কর্মে বৃটিশ এবং জার্মান দূতও যুক্ত রয়েছেন।

তারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোটের আয়োজন নিশ্চিতে খোলাখুলিভাবে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করেছেন। রাশিয়ান ফেডারেশনের মূখপাত্র বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার যেসব মৌলিক নীতি রয়েছেন এমন আচরণ তা লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ডিপ্লোম্যাট, ইমিউনিটি, অ্যাম্বাসি এবং সিকিউরিটি এই চার শব্দের ব্যখ্যা কেমন হবে? এমন উন্মুক্ত প্রশ্ন রেখে রাশিয়ার মূখপাত্র বলেন, কেউ যদি আমাদের কাছে জানতে চায় এ শব্দগুচ্ছেে মানে কি? আমরা সর্বদা তাকে আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশন দেখতে এবং সেই অনুসারে চলতে আহ্বান জানাই। রাশিয়ার মূখপাত্র বলেন, সত্য এটাই যে, কূটনীতির এই মৌলিক নীতি বা বিধানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করতে দেখি। সিরিয়ায় রাশিয়ান দূতাবাসে আক্রমণ কিংবা অন্যত্র রাশিয়ার ওপর সন্ত্রাসী হামলা হলে উপরুল্লিখিত দেশগুলো নীরব থাকে বলেও অভিযোগ করেন মস্কোর মূখপাত্র।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নে পশ্চিমা বন্ধুরা সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ তুলে ধরছেন। এটাকে চাপ মনে করে প্রায়শই বিরক্তি প্রকাশ করা হচ্ছে সরকারের তরফে। গত সপ্তাহে স্বপ্রনোদিত বিবৃতি দিয়ে ঢাকাস্থ রাশিয়ান দূতাবাস পশ্চিমাদের এমন কর্মকে ‘হস্তক্ষেপ’ আখ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধে একহাত নিয়েছে। এবার মস্কোর প্রতিনিধি ঢাকায় মার্কিন দূতের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটিকে সামনে এনে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাঁড়লেন। স্মরণ করা যায়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ১৪ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে প্রায় এক দশক ধরে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাসার বাইরে একদল লোক তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন। নিরাপদে শাহীনবাগ ত্যাগ করার পর সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জরুরি সাক্ষাৎ করে তিনি ঘটনার বিস্তারিত অবহিত করেন। পরদিন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে ডাকা হয় স্টেট ডিপার্টমেন্টে। সেখানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।