খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব ‘বৈসু’ শুরু হয়েছে। চৈত্র মাসের ২৯ তারিখ সকালে রীতি অনুযায়ী দেবী গঙ্গার উদ্দেশে ফুল ও হাতে বোনা নতুন কাপড় জলে ভাসিয়ে ‘হারি বৈসু’ উদযাপন করেন ত্রিপুরা নারীরা।
খাগড়াছড়ি শহরের খাগড়াপুর এলাকায় রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে বন থেকে সংগৃহীত মাধবীলতা, অলকানন্দা, জবা ইত্যাদি ফুল দিয়ে গঙ্গা দেবীর পুজা করেন ত্রিপুরা নারীরা। রিনা-রিসাই নামে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে উৎসবে অংশ নেন তারা।
এই উৎসবের মাধ্যমে পুরানো বছরের দুঃখ-গ্লানি বিসর্জন দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতি নেন তারা।
হারি বৈসুতে অংশ নেয়া রীতি ত্রিপুরা ও তুলিকা ত্রিপুরা বলেন, ‘ভোরে ফুল সংগ্রহ করে নদীতে এসে তা ভাসিয়ে দেবী গঙ্গার পুজা করি। এতে আমরা খুবই আনন্দ পাই।’
ঢাকায় বসবাসরত গায়ত্রী ত্রিপুরা বলেন, ‘অনেক বছর পর এ উৎসবে অংশ নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’
বৈসু উৎসব তিন দিনব্যাপী চলে হারি বৈসু, বৈসুমা এবং বিসিকাতাল। বৈসুমা দিনে ঘরে ঘরে অতিথি আপ্যায়ন করা হয় এবং বিসিকাতালের দিন নতুন বছরকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেয় ত্রিপুরারা। বৈসু উৎসব শেষ হবে ১৫ এপ্রিল।
বৈসু উদযাপন কমিটির সদস্য দীনা ত্রিপুরা বলেন, ‘এই উৎসব মূলত নারীদের অংশগ্রহণে হয়। রিনা-রিসাই পোশাক নিজেরা বুনে তারা দেবী গঙ্গার উদ্দেশে ভাসান। বিশ্বাস করা হয়, এতে গঙ্গা দেবীর আশীর্বাদে বুনন কাজে আরও নিপুণতা আসে।’
অন্যদিকে একই দিনে চাকমা সম্প্রদায়ের ‘বিজু’ উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল, যা ‘মূল বিজু’ নামে পরিচিত। এ দিনে চাকমাদের ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়ন। রান্না হয় বিশেষ ‘পাচন’ তরকারি, যা অন্তত ৩২ ধরনের সবজি মিশিয়ে প্রস্তুত করা হয়। কেউ কেউ ১০০ প্রকার সবজি ব্যবহার করে থাকেন। চাকমারা বিশ্বাস করেন, পাচন একটি ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার।
এই দিনে কাউকে আমন্ত্রণ করতে হয় না, যেকোনো মানুষ যেকোনো ঘরে গিয়ে বিজু ভোজে অংশ নিতে পারেন। অতিথি আপ্যায়নের এই সার্বজনীনতা পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। অনেক পর্যটকও এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন।